ঈদের জামায়াত কোথায়, মসজিদে না-কি ঈদগাহে?
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বদ্ধ জায়গায় কাজ করার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিরুৎসাহ করছেন। অথচ ঈদের জামাত মসজিদে করার নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিপুলসংখ্যক মুসল্লির এভাবে মসজিদে জমায়েত হওয়ার বিষয়টি করোনার প্রাদুর্ভাব আরো বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মসজিদের ভেতর ঈদ জামাতের বদলে খোলা মাঠে আদায় করাটাই বেশি নিরাপদ। এ বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। আশা করি, যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হবে।’
তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এসংক্রান্ত কোনো সুপারিশ পায়নি বলে জানা গেছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান গত রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনার প্রকোপ থাকায় আমরা গত বছরের মতোই নির্দেশনা দিয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নতুন কোনো সুপারিশ করলে আমরা নতুন নির্দেশনা জারি করব। এখন পর্যন্ত মসজিদে ঈদ জামাত আদায় করার নির্দেশনাই বহাল আছে। তবে কেউ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করলে সে ক্ষেত্রে তো বাধা দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’ এদিকে এবার ঈদুল ফিতর কবে হবে, তা জানা যাবে আজ বুধবার। সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার তথ্য পর্যালোচনায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক হবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। বাংলাদেশের আকাশে আজ শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ২৯ দিন রোজা শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঈদ হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে পুরো ৩০ দিন রোজা শেষে ঈদ হবে শুক্রবার। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও চাঁদ দেখা গেলে ৯৫৫৯৪৯৩, ৯৫৫৫৯৪৭, ৯৫৫৬৪০৭ ও ৯৫৫৮৩৩৭ নম্বরে ফোনে অথবা ৯৫৬৩৩৯৭ ও ৯৫৫৫৯৫১ নম্বরে ফ্যাক্স করে জানানোর অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা : ঈদের জামাতে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না সে বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত ২৬ এপ্রিল জারি করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না। ঈদগাহ বা খোলা মাঠে ঈদের জামাত হবে না। ঈদের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। সবাই নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে পারবেন। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। মসজিদে অজুর জায়গাতেও সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে আসবেন। অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। জামাতে কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।
ঈদ জামাত : প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং সর্বশেষ ও পঞ্চম জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
শোলাকিয়া ও গোর-এ-শহীদ ময়দানে ঈদ জামাত হচ্ছে না : উপমহাদেশের অন্যতম বড় দুই ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবারও করোনার কারণে ঈদ জামাত হবে না।
সাংবাদিককে জানান, গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে একসঙ্গে আট লক্ষাধিক মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। ময়দানটির আয়তন সাড়ে ১৪ একর। গতবার ঈদুল আজহার সময়েও এই মাঠে ঈদ জামাত আদায় হয়নি। গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শোলাকিয়া ময়দানের আয়তন সাড়ে সাত একর। এই ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক শামীম আলম জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবারও শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান