ইবরাহিম (আ.)-এর পোষা পাখিরা যেভাবে জীবিত হয়

প্রকাশিত



মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ছিলেন ইবরাহিম (আ.)। তাঁকে ‘আবুল আম্বিয়া’ বাবা নবীদের পিতাও বলা হতো। একবার তিনি মহান আল্লাহর কাছে আবদার করে বসলেন, মৃতকে জীবিত করার প্রক্রিয়া দেখার। সুরা বাকারার ২৬০ নম্বর আয়াতে যে ঘটনার বর্ণনা স্বয়ং আল্লাহই দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

ইবরাহিম (আ.) আল্লাহ তাআলার কাছে আরজ করলেন, আপনি কিভাবে মৃতকে পুনর্জীবিত করবেন, তা আমাকে প্রত্যক্ষ করান। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করলেন, ‘এরূপ আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করার কারণ কী? আমার সর্বময় ক্ষমতার প্রতি কি আপনার আস্থা নেই? ইবরাহিম (আ.) নিজের আস্থা বিবৃত করে নিবেদন করলেন, আস্থা ও বিশ্বাস তো অবশ্যই আছে। কেননা, আপনার সর্বময় ক্ষমতার নিদর্শন সর্বদা, প্রতি মুহূর্তেই দেখতে পাচ্ছি এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই তার নিজের সত্তা থেকে শুরু করে এ বিশ্ব জাহানের প্রতিটি অণু-পরমাণুতে এর প্রমাণ দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু মানব প্রকৃতির সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে যে অন্তরের বিশ্বাস যতই দৃঢ় হোক, চোখে না দেখা পর্যন্ত অন্তরে পূর্ণ প্রশান্তি আসতে চায় না, প্রশ্নের পর প্রশ্ন জাগতে থাকে; এটা কী করে হবে, না জানি এর প্রক্রিয়াটা কেমন?

মনের মাঝে এ ধরনের প্রশ্ন উদয় হওয়ার ফলে পূর্ণ প্রশান্তি লাভ হতে চায় না। নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ কারণেই ইবরাহিম (আ.) এরূপ নিবেদন করেছিলেন, যাতে মৃত ব্যক্তিকে জীবিতকরণ সংক্রান্ত চিন্তা দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। অধিকন্তু মনে যাতে স্থিরতা আসে; নানা প্রশ্নের জাল যেন অন্তরে বাসা বাঁধতে না পারে এবং মনের দৃঢ়তা যাতে বজায় থাকে। আল্লাহ তাআলা তার প্রার্থনা কবুল করলেন এবং বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার জন্য একটি অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন, যাতে মুশরিকদের যাবতীয় সন্দেহ-সংশয়ও দূর হয়ে যায়। প্রক্রিয়াটি ছিল এই যে ইবরাহিম (আ.)-কে চারটি পাখি ধরে নিজের কাছে রেখে সেগুলোকে এমনভাবে লালন-পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হলো, যাতে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে পোষ মেনে যায় এবং ডাকামাত্রই হাতের কাছে চলে আসে। তদুপরি তিনি যেন সেগুলোকে ভালোভাবে চিনতেও পারেন।

পরে নির্দেশ হলো, পাখিগুলোকে জবাই করে এগুলোর হাড়-মাংস, পাখাসহ সবই কিমায় পরিণত করুন, তারপর সেগুলো ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে নিজের পছন্দমতো কয়েকটি পাহাড়ে একেকটি ভাগ রেখে দিন। তারপর এদের ডাকুন। তখন এগুলো আল্লাহর কুদরতে জীবিত হয়ে উড়ে আপনার কাছে চলে আসবে। ইবরাহিম (আ.) তা-ই করলেন। অতঃপর এদের যখন ডাকলেন, সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সঙ্গে হাড়, পাখার সঙ্গে পাখা, গোশতের সঙ্গে গোশত, রক্তের সঙ্গে রক্ত মিলে আগের রূপ ধারণ করল এবং তার কাছে উড়ে এসে উপস্থিত হলো। [তাফসিরে কুরতুবি : ৪/৩১৪]

আপনার মতামত জানান