‘ইউপির সিটে বসলে সব পুড়ে যাবে’

প্রকাশিত



আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের এমপি তানভীর ইমাম প্রচারণায় নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকাশ্যে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে পৃথক তিনটি নির্বাচনী সমাবেশ করেন তিনি। এসব সভায় নৌকায় ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি কঠোর বার্তা দেন তিনি। এসব অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়। দুটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের হাতেও এসেছে।

একটি ভিডিওতে এমপি তানভীর ইমামকে বলতে শোনা যায়, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হন, আপনি নির্বাচনে জিতে যে সিটে (চেয়ার) বসবেন, মনে রাখবেন, ওই সিট আমি আগুনের গোলা দিয়ে তৈরি করব। ওই আগুনে আপনার পরনের প্যান্ট কেন, ভেতরে যা থাকবে তা-ও পুড়ে যাবে। তার পরও যদি না মানেন, আমার কাছে আরো ব্যবস্থা আছে। সেই দিকে যাবেন না, নিজেদেরকে শেষ করে দিয়েন না। আপনাদের মতো কিছু মানুষ আওয়ামী লীগ থেকে চলে গেলে দলের বেশি ক্ষতি হবে না। কিন্তু আপনাদের জীবনে এর প্রভাব কঠিনভাবে পড়বে। তাই বলছি, বিদ্রোহী হইয়েন না। আমরা চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ১৩টি নৌকা দিয়েছেন, সেই ১৩টি নৌকাই জয়ী হবে, এর বাইরে কিছু যেন না হয়।

অপর একটি ভিডিওতে এমপি তানভীর ইমামকে বলতে শোনা যায়, আমি এখানে কোনো জনসভা করতে আসিনি। আমি এসেছি কিছু নির্বাচনী নির্দেশনা দিতে, যাতে ২৮ তারিখের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক জয়ী হয়। এখানে আর কেউ জয়ী হতে পারবে না। এখন থেকে আমরা প্র্যাকটিস করতে থাকি, যাতে ধীরে ধীরে আমাদের কেন্দ্র বাড়তে থাকে। নির্বাচনের আগের কয়েক দিন শুধু নৌকার আওয়াজ থাকবে, আর কেউ থাকবে না।

উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আকমাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে দলীয় প্রার্থী আব্দুস সালেকের পক্ষে বাকুয়া গ্রামে বিশাল নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন এমপি সাহেব।

উপজেলার বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এমপি সাহেব নৌকার প্রার্থী হুমায়ুন কবির লিটনের পক্ষে হাওড়া এলাকায় সমাবেশ করেছেন। এ ছাড়া ওই দিন সন্ধ্যায় সলপ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী শওকত ওসমানের পক্ষে সমাবেশ করেন এমপি।

এমপি ও নৌকার প্রার্থীদের এমন আচরণ ও হুমকি-ধমকির কারণে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ভোটাররা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তবে এসব বিষয়ে অভিযোগ করতেও ভয় পাচ্ছেন তারা। এখনো প্রতীক বরাদ্দ না হলেও নৌকার প্রার্থীরা এলাকায় বড় বড় শোডাউন করছেন বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।

এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় এমপির অংশগ্রহণের বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন হাটিকুমরুল ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী আরাফাত রহমান। তিনি বলেন, এখানে নৌকার প্রার্থী আলম রেজা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, চেয়ারম্যানের ব্যালট টেবিলে রেখে ভোটারদের মেম্বারের ব্যালট নিয়ে বুথের ভেতরে যেতে হবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী আলম রেজা বলেন, কেউ এমন কথা বলে থাকলে সেটা ভিত্তিহীন কথা বলেছে। এসব কথার কোনো সত্যতা নেই।

আজ বুধবার দুপুরে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, এমপি মহোদয় নির্বাচনী সমাবেশ করছেন এমন অভিযোগ কেউ করেনি। আমাদের তো এসব বিষয় মনিটরিং করার মতো লোকবল নেই। আমরা শুধু অভিযোগ পেলে সেটির তদন্ত করি।

সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী সভায় বা প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ১৩টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১১ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৪ নভেম্বর। এসব ইউপির প্রতিটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

আপনার মতামত জানান