অসুস্থ মাকে রেখে গেল নির্জন বিলে
কঙ্কালসার শরীর, ডান চোখের ওপরে মাথার একাংশসহ বড় টিউমার। লালচে হয়ে যাওয়া মাংসপিণ্ডের মতো ডান চোখ বের হয়ে যাচ্ছে। দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা নেই, মুখের ভাষাও অস্পষ্ট। বয়স প্রায় ৯০।
এমন এক বৃদ্ধ মাকে নির্জন বিলের মাঝখান থেকে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আধমরা অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে ময়মনসিংহের নান্দাইলের মুশুল্লী ইউনিয়নের ভারুয়া বিলে। স্থানীয়রা ধারণা করছে, মরার জন্যই ওই বৃদ্ধাকে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিলটির অবস্থান ওই ইউনিয়নের উত্তর মুশল্লী এলাকায়।
এমনিতেই ওই বিলে লোকজন কম যায়। তার ওপর কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজনের বিলে যাওয়া-আসা কমে গেছে অনেক। এ অবস্থায় ফারুক মিয়া নামের এক তরুণ নিজের হাঁসের দলের খোঁজে বিলের মাঝখানে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় একটি উঁচু মাটির টিলায় ঝোপের মধ্যে পড়ে রয়েছে এক বৃদ্ধ নারী।
কোনো নড়াচড়া নেই। মশা-মাছি ও বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ তার শরীরে ও আশপাশে ঘিরে ধরেছে। কাছে গিয়ে দেখতে পায় অস্পষ্টভাবে শব্দ করছেন বৃদ্ধা। পরক্ষণেই প্রতিবেশী রুবেল নামের এক যুবককে ডেকে এনে সেখান থেকেই নিজেদের মোবাইলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে।
এরপর নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক মো. রুবেল হোসেন একটি দল নিয়ে আধমরা অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
জরুরি সেবায় ফোন করা মো. রুবেল জানান, ফারুক তার প্রতিবেশী। সে হাঁস লালন পালন করে। গতকাল শনিবার দুপুরে ফারুক নিজের হাঁসের দল আনতে বিলের মাঝখানে যায়। সেখান থেকেই তার মোবাইলে ফোন করে ঘটনা অবহিত করলে তিনি সরাসরি সেখানে যান। পরে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিক ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নারীকে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, তার নাম দোলেনা বেগম। বাড়ি হাজীবাড়ি বলে জানান। তার ছেলে তাকে তিন দিন আগে চোখ-মুখ ঢেকে এখানে ফেলে রেখে যায়। আসবে বলে পরে আর আসেনি।
এ বিষয়ে নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক মো. রুবেল হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনা দেখে ও বৃদ্ধার কাছ থেকে শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছি। এ রকম ঘটনা বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছিল।’ পরে বৃদ্ধার শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
বর্তমানে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ওই বৃদ্ধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই নারীকে দেখছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. মাহবুবুল আলম। তিনি জানান, বয়সের ভারে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই নারী এমনিতেই গুরুতর অসুস্থ। এর মধ্যে খাওয়াদাওয়া না করায় প্রেসার কমে গিয়ে শরীর খারাপ হয়ে গেছে। এখন তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
আপনার মতামত জানান