সোনারগাঁয়ে আতঙ্কের নাম ‘সিপ্রোসিন ট্যাবলেট’

প্রকাশিত


‘খেলা হবে বিরুর সঙ্গে আমার, আমি খেলব একা। আমার নাম বাবু, বইলা দিবা নারায়ণগঞ্জের সিপ্রোসিন ট্যাবলেট বাবু।’ গত মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়নে একটি নির্বাচনী উঠান বৈঠকে এমন বক্তব্য দেন সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল হোসেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত ‘সিপ্রোসিন ট্যাবলেট’ সোনারগাঁয় এখন হুমকি ও আতঙ্কের নাম হিসেবে মানুষের মুখে মুখে প্রচার হচ্ছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল হোসেন একাধিকবার অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। ডা. বিরুকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জিতলে আমার পাঁচ বছর লাগব না। আমি হেরে ঠিক কইরা ফেলমু এক মাসে।


এমনিতেই তো ঠিক কইরা ফেলসিলাম, আল্লাহ জানে বাঁচাইসে। লুঙ্গি রাইখা দিসিলাম, আমি তো তার বাড়ির সামনেই হুমকি দিলাম। তার যদি বুকের পাটা থাকে আমার বাড়ির সামনে মিছিল করতে বইলেন। আমি তো তোমার বাড়ির সামনেই উল্টাপাল্টা কথা বলছি। তুমি যদি তোমার মায়ের দুধ পান করে থাক তাইলে আমার বাড়ির সামনে মিটিং করে দেখাও, ওপেন চ্যালেঞ্জ করে গেলাম।’ এ সময় ভোটগ্রহণের দিন ডা. বিরুকে তার নিজ কেন্দ্র (জামপুর ইউনিয়নের ওটমা কেন্দ্রে) থাকারও আহŸান জানান তিনি। বক্তব্যের একপর্যায়ে বাবুল বলেন, ‘আমি যদি পাস করি, আর আবদুল্লাহ আল কায়সারের (সংসদ সদস্য) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই তাহলে দুই মাস পরে যদি এই চৌধুরী বংশ আমি উচ্ছেদ না করতে পারি আমি রিজাইন দিব ক্ষমতা থেকে।’

সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন পাচ্ছেন উপজেলার কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলের বাবুল হোসেন। বর্তমান ও সাবেক এমপির সমর্থন পাওয়ায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একাংশ ছাড়াও ১০ ইউনিয়নের অধিকাংশ চেয়ারম্যান, মেম্বাররা নির্বাচনে আনারসের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। অপরদিকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরু, সাবেক সংসদ সদস্য মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেন দ্বীপ, সাবেক উপজেল চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের ছেলে তানহা মোশারফ, বর্তমান এমপির চাচা শিল্পপতি মনির হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান সহ আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন পাচ্ছেন মাহফুজুর রহমান। তবে ভোটের মাঠে রব উঠেছে এ নির্বাচন হবে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সাধারন জনগণের।

হুমকির ঘটনায় নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অপরাধে ১৭মে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত প্রশাসক ও ৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনী রিটানিং কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি বাবুল ওমরকে ১ কার্যদিবসের মধ্যে কারন দর্শানোর নোর্টিশ দিয়েছেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়।


অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু এ বক্তব্যকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভ’ত উল্লেখ করে বলেন, ‘এমন বক্তব্য সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক মাঠকে অস্থির করে তুলবে।’

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘একজন সন্ত্রাসী যিনি কিনা বিজয়ী হলে একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করতে চান, তার বিষয়ে জনগণই বিচার করবে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাবুল ওমরের সাথে যোগাযোগ করতে তার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

আপনার মতামত জানান