জল্লাদ’ শাহজাহান মুক্তি পেলেন

প্রকাশিত


৩২ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান। যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত অন্তত ২৬ অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তিনি বহুল আলোচিত। অস্ত্র আইনসহ দুটি মামলায় সাজা খেটে আজ রোববার (১৮ জুন) বেলা ১১ টা ৪৬ মিনিটে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কারাগার থেকে বের হন শাহজাহান। বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি হলেও তিনি আবাসন ও কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তিত।


সরেজমিনে দেখা যায়, সাদা শার্ট-প্যান্ট পরা জল্লাদ শাহজাহান কালো রঙের ব্যাগ হাতে হাসিমুখে কারাগার থেকে বের হচ্ছেন। তাঁর আশপাশে ১০-১৫ জন কারারক্ষী।

সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শুরুতেই কেঁদে ফেলেন শাহজাহান। কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা আস্তে আস্তে কথা বলতে থাকেন।

জল্লাদ শাহজাহান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলাম। তাই আমার কোন বাড়িঘর বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, তিনি যেন আমাকে বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন, যেন বাকি জীবন আমি সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারি।’

২৬ দণ্ডিতকে ফাঁসি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিচারপ্রক্রিয়া শেষে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলাম। তাই কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কোনো না কোনো কাজ করতে হয়। আমি একটু সাহসী ছিলাম বলে আমাকে জল্লাদের কাজে নিয়োগ করা হয়।’

এখন কোথায় যাবেন জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, ‘আমার কোনো বাড়িঘর নেই। শুনেছি আমার এক বোন ও ভাগিনা আছে। তবে তাদের সঙ্গে আমার কোন দেখা হয়নি। কারাগারে পরিচিত কিছু লোকজনের সঙ্গে আমি এখন নর্দ্দা যাচ্ছি।’

কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে শাহজাহান ভূঁইয়ার বয়স এখন ৭৩ বছর। তিনি অবিবাহিত। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের একটিসহ দুটি মামলা আছে। ১৯৯১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে মানিকগঞ্জ কারাগরে নেওয়া হয়। শাহজাহানের মোট সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। এর মধ্যে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিনের সাজা মাফ পান। প্রায় ৩২ বছরের সাজাভোগ শেষে তিনি আজ মুক্তি পেলেন। মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, কারাগারের মধ্যে ভালো কাজ এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়। পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে।

কারাগারের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন শাহজাহান। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ছয়জন, যুদ্ধাপরাধী ছিলেন চারজন, জেএমবি সদস্য ছিলেন দুই জন ও অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামি ছিলেন ১৪ জন।

কারা সূত্র জানায়, শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক, ৬ জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামী খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামী হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনকে জনের ফাঁসি দিয়েছেন।

১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলে রাখা হয় তাকে।

শাহজাহানের দুই মামলার তথ্য:

স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১৮/১৯৯২, মানিকগঞ্জ ০৩(১২)৯১, ধারা- অস্ত্র আইন ১৯(এ)। এই মামলায় শাহজাহানের ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার সাজা হয়েছিল। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়েছিল সেই মামলায়। যা কার্যকর শুরু হয় ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে।

অপর মামলাটি হলো দায়রা ৪০/৯২, মানিকগঞ্জ ২(১২)৯১, ধারা-৩৯৬দ:বি। এই মামলায় তার সশ্রম অর্থাৎ ৩০ বছরের সাজা হয়। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ডের রায় হয়।

দুই মামলায় তার সাজা মওকুফ (রেয়াত) হয় ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮ দিন।

আপনার মতামত জানান