কবি নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য

প্রকাশিত

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে আসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়টা ছিল বেশ হৃদয়স্পর্শী। যেন দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটলো। সাক্ষাৎ হতেই বঙ্গবন্ধু কবির মাথায় শরীরে বারবার হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন। আর কবি নজরুল ‘নির্বাক কবি’ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে। হাত বাড়িয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বললেন। কিন্তু মুখের ভাষা বোঝা গেল না। দুর্বোধ্য সেসব কথা। সদা প্রাণোচ্ছল কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলার সব জায়গা একসময় চষে বেরিয়েছেন। তিনি বিদ্রোহের গান গেয়ে মানুষের মুখে ভাষা ফুঁটিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন ঘুমন্ত বাঙালিকে। স্বাধীনতার মন্ত্রে দেশমাতৃকার মুক্তির পথে আগুয়ান এক কবি স্বাধীন বাংলায় এসেছেন নির্বাক ও ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে।

বিদ্রোহী কবি ও তার পরিবার সদস্যরা সেদিন ছিলেন ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডের এক দ্বিতল বাড়িতে। কলকাতা থেকে ঢাকা আসার পর কবিকে দেখতে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, দুই মেয়ে আর ছোট রাসেল।

১৯৭২ সালের পত্রিকাদৈনিক বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভবন থেকে কাজ সেরে আড়াইটায় বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির বাড়িতে আসেন। বাড়ি গিয়ে তিনি বুকশেলফ থেকে বের করেন নজরুলের কাব্যগ্রন্থ সঞ্চিতা। আবৃতি করেন বিদ্রোহী কবিতা। তারপর মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেইদিন হবো শান্ত, আবৃত্তি করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসেন। তার বাড়ি থেকে ২৮ নম্বর কবির বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত আওড়ালেন কবিতার চরণ।

বঙ্গবন্ধু গেটে ঠেলে ঢুকলেন। কবিকে যেখানে রাখা হয়েছে সে কক্ষে গিয়ে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে পরিয়ে দেন পুষ্পমাল্য। বেগম মুজিব নিজের হাতে তুলে দেন অতি সযতনে বানানো ফুলের তোড়া। কবির মাথায় ও শরীরে হাত বুলিয়ে দেন। কবি নির্বাক চোখ মেলে তাকিয়ে থাকলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে।

নজরুলকে বাঙালির স্বাধীন সত্তার রূপকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কবি নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মার, বাঙালির স্বাধীন সত্তার রূপকার।’ কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। পবিত্র মাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের চারণ কবি বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম দিবস পালিত হচ্ছে সেটিকে আনন্দ ও গর্বের বিষয় উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, “শুধু বিদ্রোহ ও সংগ্রামের ক্ষেত্রেই নয়, শান্তি নিকুঞ্জ কবি বাংলার অমৃত কন্ঠ ‘বুলবুল’। দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যের এই বিস্ময়কর প্রতিভার অবদান সম্বন্ধে তেমন কোনও আলোচনা হলো না। বাংলার নিভৃত অঞ্চলে কবির বিস্মৃতপ্রায় যেসব রত্ন আছে, তা পুনরুদ্ধারের যেকোনও উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য।”

১৯৭২ সালের পত্রিকাবাণীতে বঙ্গবন্ধু কবির সৃষ্টি পুনর্মূল্যায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশের বিদগ্ধ সমাজকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নজরুল একাডেমী কাজে অগ্রণী হয়েছে জেনে আস্বস্ত হওয়া গেছে। নজরুল জন্ম দিবসের উৎসবে মিলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজে বিদগ্ধ সমাজ আত্মনিয়োগ করবে বলে আশা রাখি।’

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে নিয়োজিত জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন সবসময় নির্যাতিত জনগণের পাশে থেকেছে। এটিই তাদের জনগণের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

তাসের প্রতিনিধি সার্গেই এফ বুলান্ডসেন্তের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এনা খবরটি পরিবেশন করে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণ সবসময়ই মুক্তিসংগ্রামরত নির্যাতিত জনগণের পাশে থেকেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থনীতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে।’

সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতি সেখানকার বেকার সমস্যা ও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে কী করে সফল হলো, তা থেকে অন্যান্য দেশের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘সোভিয়েত জনগণ বিশ্ববাসীকে বহু কিছু দেখিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশের জন্য সেসব সহায়ক হতে পারে।’

সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। ২৪ মে গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন ডাকসুর নবনির্বাচিত সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ছাত্র সংসদে ছাত্র ইউনিয়নের বিজয়ীরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন বলে বাসসের খবরে জানানো হয়। ছাত্র নেতারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

লেখক: উদিসা ইসলাম

সুত্র : banglatribune

আপনার মতামত জানান