ক্ষোভ নিয়ে চলে গেলেন আওয়ামী লীগ নেতা দীনেশ
গত ৪ মাস আগে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে টাকার অভাবে বারডেম হাসপাতালে একমাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে বিছানায় পড়ে ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দীনেশ সূত্রধর। আজ সোমবার দুপুরে তার নিজ বাড়ি জিয়া নগরে পরলোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬০ বছর। তিনি এক ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রীসহ অনেক শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
দীনেশ সূত্রধর ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক, ২০০২-০৩ সাল পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ২২ বছর পর্যন্ত যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও নীতি ও আদর্শের সাথে আপোষ করেননি। কোনোদিন পদপদবির দাপট দেখিয়ে কোনো রকম অনৈতিক কাজ করেননি। তাই তৎকালীন যুবলীগের সকল নেতাকর্মীরা অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। তাদের একযুগের যুবলীগকে সোনারগাঁয়ে যুবলীগের স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।
২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি দীনেশ সুত্রধর ও কোহিনুর ইসলাম রুমার বাড়িতে একযুগে হামলা চালায়। হামলায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বিএনপি সন্ত্রাসীরা। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের সৈনিক দীনেশ সুত্রধর বিএনপি-জামায়তের মামলার শীকার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। কারানির্যাতিত এ নেতা অসুস্থ হওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি। তার দীর্ঘদিনের সুখদুঃখের স্বারথী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শেষ বিদায় পর্যন্ত সাথে ছিলেন। সৎকার শেষ করে উদ্ধবগঞ্জ শশ্মানঘাট থেকে বাড়ি থেকে বিদায় নেন যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান ।
দীনেশ সুত্রধরের একমাত্র ছেলে দীপক সুত্রধর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ করে বাবার চিকিৎসা চালিয়েছেন। সোনারগাঁয়ের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন দীপক সুত্রধরের সাথে কথা বলে সান্তনা, সমবেদনা ও আর্থিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছেন।
দীনেশ সুত্রধরের একমাত্র ছেলে দীপক সুত্রধর জানান, শেষ সময়ে বাবা অনেক কষ্ট ও ক্ষোভ নিয়ে পরলোক গমন করেছেন। সাবেক এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গাজী কাকাকে ছাড়া কেউ বাবার খবর রাখেনি। পত্রিকায় দেখতাম সোনারগাঁয়ের অনেক নেতা অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছে কিন্তু আমার বাবার মতো ত্যাগী ও কারানির্যাতিত নেতার পাশে দাঁড়ানোর মতো একজন নেতা সোনারগাঁয়ে ছিল না। বাবা ইশারা ইঙ্গিতে রাজনীতির কথা বলতেন আর অঝরে চোখের পানি ফেলতেন।
দীনেশ সূত্রধরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুলাহ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, উদ্ধবগঞ্জ শশ্মান কিমিটির সভাপতি অসিত কুমার দাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ।
আপনার মতামত জানান