আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে ভোটারদের দরজায় তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা শহরকে সুন্দর ও উন্নত দেশের আধুনিক রাজধানীর করে গড়ে তুলতে কাজ করবেন।
এছাড়াও প্রথম ৯০দিনের মধ্যে মৌলিক নাগরিক সুবিধাগুলো নগরবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াসহ পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান এবং ওয়ার্ক প্লান করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবেন। অনিয়ম বন্ধে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকবে বলেও জানান তিনি।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ ফজলে নূর তাপস আজ ‘বাসস’কে এ কথা বলেন।
তাপস বলেন, ‘ঢাকাবাসী আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে সুন্দর, সুশাসিত, উন্নত এবং ঐতিহ্যের ঢাকা গড়ে তুলতে ২৪ ঘন্টা কাজ করবো।’
তিনি বলেন, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে এবং দিনের কাজ দিনেই শেষ করা হবে। তিনি আরো বলেন, তিনি যখন কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন তখন মহানগরীর বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী বলেন, ঢাকা মহানগরীতে রাস্তা খোড়াখুড়ি বন্ধে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সিটি করপোরেশনের আইনে এ বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের আইনানুযায়ী অন্য সংস্থাকে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া আছে। সে কারণে অন্য সংস্থাকে সিটি করপোরেশন আইন ও নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে হবে।
ব্যারিষ্টার তাপস বলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নত রাজধানী দরকার। সেই উন্নত বাংলাদেশের উন্নত রাজধানী বির্নিমাণ করা অত্যন্ত জরুরি। সেই বিবেচনা করেই তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে উন্নত সিটি করপোরেশন হিসেবে সাজাতে চান।
তিনি বলেন, আজ রাস্তা করলাম কাল আরেক সংস্থা এসে রাস্তা কেটে রাস্তা নষ্ট করবে তা হবে না। যে কোন রাস্তার কাজ করার আগে সব সংস্থা থেকে চাহিদা পত্র নেয়া হবে। ‘আমরা তাদের সময় দেবো কাজ করার জন্য। আমাদের রাস্তার কাজ করার পরে অন্য কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অন্তত ৩ বছর রাস্তায় কোন কাজ করতে পারবে না। কারণ, আমাদের যে কোন কাজের কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদ থাকবে,’ বলেন তাপস।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে জানিয়ে তাপস বলেন, কোন রাস্তায় কোন যানবাহন চলবে সেটার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। সেই অনুযায়ী সেই রাস্তাগুলোকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হবে। এক সময় ঐতিহ্যবাহী ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল। ঘোড়ার গাড়ি যাতে সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে সেই পরিকল্পনাও নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে বুড়িগঙ্গাকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। নদীর পাড় দিয়ে ৮ লেনের রাস্তা করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তাপস আরো বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এই রাস্তা দিয়ে ঢাকার যে কোনো প্রান্তের মানুষ যাতায়ত করতে পারবে। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় দিয়ে টগবগিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চলবে। যাতায়াত ব্যবস্থা, বিনোদনমূলক নান্দনিক পার্ক, হাঁটার ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। বুড়িগঙ্গা নদীতে বর্জ্য ফেলা যাবে না। পুরো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকেই আধুনিক করা হবে।”
সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি সিটি কর্পোরেশনে হেল্পলাইন নম্বর চালু করবেন। হেল্পলাইনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী যেকোনো সমস্যা এবং অভিযোগ জানাতে পারবেন। এতে নগরবাসী সরাসরি মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানান তাপস।
তিনি বলেন, পঞ্চায়েতের মাধ্যমে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত ঢাকা গড়ে তোলা হবে। এলাকার মুরুব্বিরা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবেন। সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নজরদারিতে রাখার উপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তাপস বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি ঢাকাকে দূষণমুক্ত করে সবুজ ঢাকা গড়ে তুলবেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনা নেয়া হবে। নারী ও বৃদ্ধদের জন্য উন্মুক্ত জায়গা থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ থাকবে। নগরীকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকবে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা বন্ধ করা হবে। সবাই মিলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর নগরী গড়ে তোলা হবে।
ঢাকাবাসীর জন্য যানজট অবশ্যই বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে। সেটা শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এখন ঢাকার যানজটের যে পরিস্থিতি এটাতো আসলে অসহনীয় অবস্থা। এ বিষয়ে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যানজট নিরসনে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করে তাপস বলেন, বুড়িগঙ্গা এবং শীতল²া নদীর প্রান্তে পুরান ঢাকা। উন্নত বিশ্বের রাজধানীতে দেখা যায় তাদের একটা নদী থাকলে সেটা তারা কাজে লাগায়। আমরা দুটো নদী থাকার পরেও কাজে লাগাতে পারি নাই। নদী দুটোকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তা ভাবনাও করা হবে বলে জানান তিনি।
খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রতিটা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের জায়গা থাকবে যেখানে ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে। খেলার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। দখল করা মাঠ উদ্ধার করা হবে, বলেন তাপস।
আপনার মতামত জানান