নেলসন ম্যান্ডেলার শিক্ষনীয় বাণী
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ছবি প্রকাশ করেছে সাউথ আফ্রিকা দি গুড নিউজ, ক্রিয়েটিভ কমন্সের অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে (সিসি বাই ২.০)।
নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং এক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নাগরিক, তিনি ৯৫ বছর বয়সে ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। অ্যাপার্টহাইড নামে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই-এর কারণে ২৭ বছর জেল খেটেছেন। তিনি ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন, এর চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং মাত্র একটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, যা আফ্রিকার রাজনীতিতে বিরল এক ঘটনা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত প্রিয় এই নেতা বক্তা হিসেবে ছিলেন দারুন। তার অন্যতম এক বিখ্যাত উক্তি ১৯৬৪ সালে রিভোনিয়া ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি চলাকালে প্রদান করা বক্তৃতা থেকে গ্রহণ করা হয়, যেটিতে তিনি বলেন:
আমি সাদাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং আমি কালোদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি আদর্শিক গণতন্ত্র এবং মুক্ত সমাজের প্রশংসা করি, যেখানে সকল ব্যক্তি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে এবং সমান সুযোগ লাভ করবে। এটি হচ্ছে একটি আদর্শিক অবস্থান, যার মধ্যে দিয়ে বাঁচা দরকার এবং আমি তা অর্জনের আশা করি, কিন্তু এটি এমন এক আদর্শ, যদি প্রয়োজন পড়ে, তার জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।
রিভোনিয়া মামলায় প্রদান করা বক্তৃতা ছাড়াও, সারা জীবন তিনি অনেক স্মরণীয় এবং জ্ঞানগর্ভ উক্তি করেছেন। মৃত্যুর পরেও তিনি টুইটার ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তাঁর বাণী তুলে ধরছেন, যারা এই সমস্ত উক্তি তুলে ধরে এই মহান নেতা মৃত্যুতে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। .
নিজেকে বিচার করা সম্বন্ধে:
আমার সফলতার ভিত্তিতে আমাকে বিচার করোনা, আমাকে বিচার কর আমার ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তিতে।
“আমি সাধু নই, তবে যদি সাধুকে এমন এক পাপী হিসেবে বিবেচনা কর, যে সৎ হবার জন্য তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আমি তাই”।
ঘৃণা বিষয়ে:
“ঘৃণা মনকে অন্ধকার করে দেয়। কৌশলের পথ রুদ্ধ করে দেয়। নেতাদের ঘৃণা করা সাজে না”।
“যদি কেউ ঘৃণা করতে শেখে তাহলে সে ভালবাসা শিখে নিতে পারে। ঘৃণা নয়, মানব হৃদয়ে স্বাভাবিকভাবে ভালবাসার জন্ম হয়”।
“ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্ম গ্রহণ করে না…”।
ক্ষমা বিষয়ে:
“সাহসী মানুষের শান্তির জন্য ক্ষমা করতে ভীত নয়”।
“পৃথিবীতে প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি যতটা অর্জন করতে পারবেন, তার চেয়ে ঢের বেশী অর্জন করতে পারবেন ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে”।
খেলাধুলা বিষয়ে:
“যেখানে এক সময় থাকে বেদনার বসবাস, খেলাধুলা সেথায় করতে পারে আশাবাদের চাষ”।
নেতৃত্ব বিষয়ে:
“পেছন থেকে নেতৃত্ব দাও- আর সাথে অন্যদের বিশ্বাস দাও যে নেতার আছে সম্মুখসারিতে”।
বর্ণবাদ বিষয়ে:
“আমি বর্ণবাদকে ঘৃণা করি কারণ এটা একটা বর্বর বিষয়, তা সে কালো বা সাদা যে কোন মানুষের কাছ থেকে আসুক না কেন”।
দৃঢ়তা বিষয়ে :
“সবসময়, যতক্ষণ না কাজ সমাধা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তা এক অসম্ভব বিষয় বলে মনে হয়।”
“যে কোন কিছুতে ভীত নয়; সে নয়, বরঞ্চ যে ভয়কে জয় করে সেই হচ্ছে প্রকৃত সাহসী।”
“সম্মান তাদের প্রাপ্য, যারা কখনো সত্যকে পরিত্যাগ করে না, এমনকি যখন পরিস্থিতি অন্ধকারচ্ছন্ন এবং বেদনাদায়ক”।
স্বাধীনতা বিষয়ে:
“কেবল শৃঙ্খলহীন হওয়া নয়, বরং স্বাধীন হওয়া মানে শ্রদ্ধা এবং অন্যের স্বাধীনতা বৃদ্ধির সাথে বসবাস”।
শিক্ষা সম্বন্ধে:
“শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায়”।
বন্দীদশা সম্বন্ধে :
“বলা হয়ে থাকে যে সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দী থাকে”।
দায়িত্ব সম্বন্ধে :
“যখন একজন মানুষ বিবেচনা করা যে নিজ জাতি এবং স্বদেশের প্রতি সে তার দায়িত্ব পালন করেছে, তখন সে শান্তিতে মৃত্যু বরণ করতে পারে”।
আপনার মতামত জানান