স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোনারগাঁয়ের রোগীদের চরম ভোগান্তি

বিশেষ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা নিতে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের। জনবলের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। এ ছাড়া অপরিচ্ছন্ন হাসপাতাল ও শৌচাগারের কারণে অসুস্থ হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অবশ্য হাসপাতালের এসব সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, বর্তমানে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন ১৭ জন। এদের মধ্যে তিনজন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। অর্থাৎ বর্তমানে ১৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসাসেবা। এদের মধ্যে তিনজন জরুরি বিভাগে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বাকিরা বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া সেবিকা রয়েছেন ২০ জন। এদের মধ্যে একজন ছয় মাস এবং আরেকজন দুই বছরের ছুটিতে গেছেন। স্বল্প এই জনবল নিয়ে দুটি বিভাগে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগীকে সেবা দেওয়ার এ সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে হাসপাতালের নিয়মিত তালিকায়।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরুরি বিভাগে শুধু কাটাছেঁড়ার সেলাই ও জ্বর-ঠাণ্ডা ছাড়া আর কোনো সেবা পান না তারা।
বহির্বিভাগে জটিল রোগের সেবা দেওয়া হলেও নেই পরীক্ষাগার। ফলে বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে রোগীদের হাসপাতালে যেতে হয়। এ ছাড়া ওয়ার্ডগুলোতে হাসপাতালের চিকিৎসক দিনে একবার পরিদর্শন করে গেলেও সেবিকা থাকেন মাত্র একজন। যেখানে রোগী থাকে ১৫ থেকে ১৮ জন। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও সেবিকা কম। বেশির ভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়।
হাসপাতালে ভর্তি আব্দুল মতিন বলেন, ‘দিনে ডাক্তার শুধু একবার দেখে যায়। একজন নার্স আছেন কিন্তু রোগী তো ১৫ জনের বেশি। তিনি একা কী করবেন? ওষুধ সব বাইরে থেকেই কিনতে হয়েছে। তারপরও সেবা পাচ্ছি এটাই বেশি।’
মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি উম্মে সালমা ইতির বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘হাসপাতালের সব জায়গায় ময়লা-আবর্জনা। তার মধ্যে শৌচাগারের অবস্থা আরও নাজুক। এখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী তেমন কাজও করেন না। ফলে অপরিচ্ছন্ন হাসপাতাল ও শৌচাগারে রোগী অসুস্থ হচ্ছে।’
হাসপাতালের সেবিকাদের সুপারভাইজার আঞ্জুমান আরা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে নার্সের সংখ্যা কম। চিকিৎসক ও নার্সের তুলনায় রোগীর প্রচুর চাপ। অনেক ক্ষেত্রে নার্সরা ছুটি চাইলে দিতে ঝামেলা হয়। শুধু নার্সই না, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও একই অবস্থা। এখানে জনবল বাড়ানো ছাড়া সেবার উন্নতি অসম্ভব।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শারমিন আক্তার তিথী বলেন, ‘এখানে রোগীর অনেক চাপ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন রোগী ভর্তি হন। এ ছাড়া জরুরি ও বহির্বিভাগে সাড়ে ৩০০ রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। তবে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই, যে সেবাটা দেওয়া দরকার আমরা সেটা দিতে পারছি না। বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বাড়াতে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখানে চিকিৎসকের পাশাপাশি সেবিকা ও স্টাফ নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত সংকট কাটিয়ে সেবার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।’
আপনার মতামত জানান