২২০ ভোল্টের লাইনের নিচ দিয়ে যাতায়াত, যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা
শরীয়তপুরের রুদ্রকরে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পুকুরে হেলে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। যার মধ্যে দিয়ে গেছে ২২০ ভোল্টের সঞ্চালন লাইন। হেলেপড়া বৈদ্যুতিক তারগুলো নিচু হয়ে পড়ায়, বাধ্য হয়ে তার নিচ দিয়েই চলাচল করছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। এতে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে একাধিকবার বিদ্যুৎ বিভাগকে জানালেও এক মাসেও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো বিদ্যুৎ বিভাগ দায় চাপাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক খুঁটিটি পুকুরের পানির মধ্যে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তারগুলো নিচু হয়ে মালেক ঢালীর বাড়ির উঠান ও একটি চলাচলের রাস্তায় সৃষ্টি করেছে প্রতিবন্ধকতা। আর তারগুলো কিছুটা ওপরে রাখতে বেশ কয়েকটি গাছের ডাল দিয়ে ঠেকানো হয়েছে। সেই তারের নিচ দিয়ে নিচু হয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮ বছর আগে চারটি নতুন খুঁটির মাধ্যমে সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। যার মধ্যে ০.২ কেভি ও ২২০ ভোল্টের সঞ্চালন লাইন চালু রয়েছে। লাইনটিতে ৭টি মিটারের মাধ্যমে সুবিধা নিচ্ছে বেশ কয়েকটি পরিবার। খুঁটি ও লাইনগুলো দেখভাল করছে এম আর ট্রেড মার্ক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিটি ঠিক করতে ২৮ মে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেন স্থানীয় বাসিন্দা মালেক ঢালী। এরপর দীর্ঘ এক মাস চারদিন পার হলেও খুঁটিটি মেরামত করা হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, খুঁটির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারকে এটি মেরামত করতে একাধিকবার বলা হয়েছে।
তানজিলা আক্তার নিপা তার স্বামী ফাইজুল বেপারী ও তিন বছরের শিশুকন্যা আবিদা সুলতানাকে নিয়ে আমতলী এলাকায় বসবাস করছেন। স্বামী কর্মক্ষেত্রে বেরিয়ে গেলে তিনি আর তার সন্তান বাড়িতেই থাকেন। সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেক সময় শিশু তার মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে হেলেপড়া বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে ঝুলে খেলা করে। এতে তারগুলোর যে কোনো একটি ছিঁড়ে গেলে হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
তানজিলা আক্তার নিপা বলেন, এই তারগুলো অনেকদিন আগে তুফানে পড়ে গেছে। আমরা এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করি। যখন বাড়িতে কাজে ব্যস্ত থাকি, তখন আমাদের শিশুরা না বুঝে এই তার এসে ধরে। প্লাস্টিকের কাভার বলে রিস্ক কম। কিন্তু দুর্ঘটনা হতে তো আর সময় লাগে না। আমরা চাই দ্রুত তার সরানো হোক।
একই কথা জানালেন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী আলী আশ্রাব। তিনি বলেন, আমাদের ৩০টি পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা এই একটাই। দীর্ঘদিন ধরে খুঁটিটি পড়ে থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো মাথা ঘামাচ্ছে না। তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমলে নিচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত খুঁটি আগের জায়গায় স্থাপন করা হোক।
এলাকার বাসিন্দা খালেক ঢালী বলেন, এক মাসের ওপরে হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে রয়েছে। আমরা যাতায়াত করতে পারছি না। রিস্ক হয়ে গেছে। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে জানালেও তারা কাজ শুরু করেনি। আমাদের একটাই দাবি দুর্ঘটনা ঘটার আগে জরুরি ভিত্তিতে খুঁটিসহ লাইনটি সংস্কার করা হোক।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম আর ট্রেড মার্কের ঠিকাদার মজিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত। তবে আমাদের লোকজন ঈদের ছুটিতে থাকায় মেরামত করা সম্ভব হয়নি। আজকে আমাদের লোকজন এসেছে, আশা করি কাল খুঁটিটি ঠিক করা হবে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি উল্লেখ করে শরীয়তপুর ওজোপাডিকোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ নবীদ আলী বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। খুঁটিটি ঠিক করতে বলা হয়েছিল ঠিকাদারকে। তবে ঈদের ছুটি পড়ে যাওয়ায় লোকজন সংকটের কারণে ঠিক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে তারা। আমরা এ নিয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। আগামীকালের মধ্যে ঠিক করার কথা জানিয়েছেন ঠিকাদার।
আপনার মতামত জানান