সোনারগাঁয় বৈশাখী মেলায় বায়োস্কোপে মজেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত


বায়োস্কোপ দেখে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি এক চোখ বন্ধ করে হাঁটু গেড়ে বসে যান। শহুরে ছলাকলা জীবনের কথা ভুলে মুহূর্তেও জন্য হারিয়ে গেছেন সরল অতীতের কাছে। হ্যা বলছিলাম বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন আয়োজিত ১৫ দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার কথা। আজ পহেলা বৈশাখ দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করতে এসে বায়োস্কোপ দেখে তিনি হারিয়ে যান ফেলে শৈশবে।

সোনারগাঁ লোকশিল্প যাদুঘর আয়োজিত বৈশাখী মেলার সবুজ খোলা এই চত্বরে ঢুকলে মনে হবে, গ্রামীণ সেই মেলাই ফিরে এসেছে আবার! টেপা পুতুল, শখের হাঁড়ি, কাঠের চাকাওয়ালা ঘোড়া, টমটম গাড়ি, নক্সিকাঁথা, শীতলপাটি, মুড়ি-মুরকি, শীতের পিঠা, গ্রামীন ঐতিহ্যের প্রদর্শনী, নাগরদোলা, পুতুলনাচ-কী নেই? এমনকি আছে বায়োস্কোপ। প্রতিবছরের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে পহেলা বৈশাখে ১৫ দিন ব্যাপী ‘বৈশাখীমেলা’র আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান এর সভাপতিত্বে মেলা উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব খলিল আহমদ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রতিমন্ত্রী লোক ও কারুশিল্প চর্চা চত্বর উদ্বোধন করেন।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত প্রদর্শনী, চিত্রাংকন ও হাডুডু, দাড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট, ফুলটোকার মতো গ্রামীন খেলা। এছাড়াও প্রতিটি স্টলে ছিল গ্রামীণ পণ্য। লোকজ সংস্কৃতির নানা উপাদান সুন্দর করে সাজানো। শুধু তাই নয়, স্টলে বসেই কাজ করছেন অনেক শিল্পী ও কারিগর। দেশের অনেক জেলা থেকে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা বিপুল আগ্রহ নিয়ে তাদের কাজ দেখছেন। চলছে কেনাকাটা।

গ্রামীণ ঐতিহ্যের মেলা বলতে যা বোঝায়, তা দৃশ্যমান বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বর। প্রতিবছরই এখানে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। এবারও বঙ্গাব্দের প্রথম দিন থেকে জমজমাট গোটা এলাকা। মেলায় অংশগ্রহন করছেন বিভিন্ন জেলার লোক ও কারুশিল্পীরা। প্রসিদ্ধ কারিগরদের নিজেদের তৈরি পণ্যসামগ্রী দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টল। মেলায় সরল ও কোমল রূপ চোখে পড়ে। স্টলগুলোতে যা-ই সাজানো, খাঁটি। দেশজ। প্রতিদিনের গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্য আছে এখানে। অধিকাংশই আদিরূপে দৃশ্যমান। কোন কোন ক্ষেত্রে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার চমৎকার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। মেলায় রয়েছে মৃৎশিল্প, বাঁশ-বেত শিল্প, নক্সিকাঁথা, শতরঞ্জি, কাঠজাতপণ্য। বেশ কয়েকটি স্টলে ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও তাঁতের শাড়ি। হাতের কাজ করা থ্রিপিস। বিছানার চাদরও বাদ যায়নি। ঝিনুকপণ্য, পুঁতির মালা পাওয়া যাচ্ছে। আছে লোকজ বাদ্যযন্ত্র। গ্রামীণ মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নাগরদোলা, বায়স্কোপ, পুতুল, সব মিলিয়ে বৈশাখী মেলার নিখাদ ধাচ। স্টলে সাজানো পোড়ামাটির নান্দনিক সৌন্দর্য যেন বাঙালীর শিকড়ের দিকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। বৈশাখী মেলা যেহেতু, মিষ্টি, মুড়ি-মুড়কি থাকবেই। দুলাল মিয়ার মুড়ি-মুড়কির স্টলে কদমা, বাতাসা, মোড়ালি, আঙ্গুরী, আমিরতি, উখড়া, নিমকি, নকুল দানা, লাড্ডু কিনতে দর্শনার্থীদের ভিড়।

অন্যদিকে উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে শত বছরের পুরোনো বটগাছের নিচে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, শতাধিক বছর ধরে সোনারগাঁ পৌরসভার জয়রামপুর গ্রামে শতাব্দীপ্রাচীন বটগাছের নিচে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বউঝিরা এ মেলায় অংশ নেয় বলে এটি বউ মেলা হিসেবেই পরিচিত। বউ মেলায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বিভিন্ন গ্রাম থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা ঝুড়িতে করে বিভিন্ন রকমের দেশীয় মৌসুমি ফল, কবুতর ও দেবীর নামে উৎসর্গ করার জন্য পাঁঠা (ছাগল) নিয়ে শতাব্দী প্রাচীন এ বটগাছের নিচে জড়ো হয়ে পূজা-অর্চনা করছেন।


কয়েকবছর পর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মঙ্গলেরগাঁও বট তলায় এবারও তিনব্যাপী বৈশাখী চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, বউ মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

আপনার মতামত জানান