সোনারগাঁর রসালো লিচু এখন বাজারে
বিশেষ প্রতিনিধি:
সোনারগাঁর রসালো লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রচন্ড দাবদাহ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। সোনারগাঁর লিচু বাজারে আগাম আসে বলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের লিচুর তুলনায় সোনারগাঁর লিচুর কদর অনেক বেশি। বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখে যায়, এখন বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় লিচু ঝুলছে। ঝাঁকড়া গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রঙের ছোট এই ফলের গুচ্ছ দেখতে বেশ মনোরম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বাগান। বাদুড় ও কাকের উপদ্রপ থেকে বাঁচাতে তারা গাছের চ‚ড়ায় ইলেক্সটিক বাতি, পলিথিন কাগজ, বাস ও টিনের তৈরি বিভিন্ন ধরনের বাজনা (ঠাঠা) লাগিয়ে বাগান পাহারা দিয়ে আসছেন। লিচুর মৌসুমে গাছে গাছে ইলেকট্রিক বাতি থাকায় রাতের মনোরম দৃশ্য খুবই উপভোগ্য। দূর থেকে দেখে মনে হবে রাতের আকাশের তারাগুলো নেমে এসেছে লাল সবুজের লিচু বাগানে।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, সোনারগাঁ পৌরসভার, বৈদ্যেরবাজার, মোগরাপাড়া, বারদী, সনমান্দি ও সাদিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লিচু বাগান রয়েছে। তবে পৌরসভার সরদার বাড়ী, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, দুলালপুর, বাড়ী মজলিশ, দীঘিরপাড়, পানাম, অর্জুন্দি, বাগমুছা, দত্তপাড়া, গোবিন্দপুর, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ইছাপাড়া, চিলারবাগ, কৃষ্ণপুরা, হাঁড়িয়া, পানাম গাবতলী, ষোলপাড়া, গাবতলী ও ভট্টপুর এলাকায় উৎকৃষ্টমানের লিচুর চাষ হয়।
লিচু চাষিরা জানায়, সোনারগাঁয়ে বর্তমানে কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি এই পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে কদমী লিচু চাষের প্রতি চাষিরা মনোযোগী বেশি। প্রতি বছর এক একটি বাগান তিন চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই কোথাও একটু খালি জায়গা পেলেই চাষিরা সেখানে কদমী লিচুর গাছ লাগায় বা বাগান তৈরি করে। আগে সাধারণত শৌখিনতার বসে বাড়ির আশপাশে লিচু গাছ লাগানো হতো। এখন তা বাণিজ্যিকভাবে নিচু জমি ভরাট করে লিচু বাগান তৈরি করা হচ্ছে। বাড়ির আঙিনায় ও কৃষি জমির পাশেও লিচুর চাষ করছেন অনেকেই। লিচুর মধ্যে সবার আগে বাদামি (পাতি) লিচু পাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য লিচু পাকতে শুরু করে। স্বাদে ও রসে পাতির লিচুর কদর রয়েছে বেশ। সোনারগাঁয়ে ছোটবড় মিলিয়ে তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানের বেশির ভাগেই কদমী লিচুর চাষ হয়।
লিচু বাগান লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, তীব্র গরমের কারনে এ বছর লিচুর ফলন আশানুরূপভাবে হয়নি। তবে পাতি লিচু আগে পাকার কারনে আমরা পাতি লিচু ভাঙতে শুরু করেছি। আগামীকাল সকালেই লিচু বাজারে উঠবে। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন প্রজাতির লিচুর চাষ হলেও কদমী লিচুর চাষে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়।
হাতকোপা এলাকার বাগান মালিক সোহেল মিয়া জানান, বাগান পরিচর্যার কারনে লিচুর ফলন কম বেশি হয়। বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা বাগানে নিয়মিত পানির ব্যবস্থা করেছি এবং সময় মতো কীটনাশক ব্যবহার করায় আমাদের ফলন ভালো হয়েছে।
সোনারগাঁ পৌরসভার গাবতলী এলাকার লিচুর বাগান মালিক আলী আজগর জানান, আমি মোট ৮ বিঘা জমিতে লিচু বাগান করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে আগত লিচু ব্যবসায়ী পশির আলী জানান, সোনারগাঁয়ের বাগানে বাগানে াজারে পাতি লিচু পেকেছে। তাই আমরা পাতি লিচু নিতে এসেছি । এ লিচু রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আমার মতো আরো পাইকারী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। সোনারগাঁয়ে লিচু সুস্বাদু হওয়ার এর চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়া সারা দেশের মধ্যে সোনারগাঁয়ের লিচুই আগে বাজারে আসে। এখানে প্রতি হাজার পাতি লিচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার এবং কদমী লিচু ৬ হাজার টাকায়।
লিচুর আড়তদার মনিরুজ্জামান মধু জানান, আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের কারণে সোনারগাঁয়ের লিচু আগে পাকে। প্রতিবছর মে মাসের প্রথমদিকেই লিচু বাজারে আসে। প্রথম পাতি জাতের লিচু, পরে কদমী জাতের লিচু ও সর্বশেষ বোম্বাই জাতের লিচু পেকে থাকে। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে এ অঞ্চলের লিচুকে ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ বলে থাকেন।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার জানান, এখানকার লিচু চাষিরা ছত্রাকনাশক ও পোকার উপদ্রব বন্ধ করার জন্য কিটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এসব কিটনাশক পরিমিত মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার কথা নয়। তিনি আরো বলেন, এ বছর খরার কারনে লিচু আকারে ছোট হলেন ফলন ভালো হয়েছে। বাগানীরা যদি ন্যায্য মূল্য পায় তবে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হবে।
আপনার মতামত জানান