মুমিন হাল ছাড়েন না কখনো

প্রকাশিত



চেষ্টা ছাড়া পৃথিবীতে কোনো কিছুই মেলে না। দুনিয়া হোক কিংবা আখিরাত, এগুলো অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো চেষ্টা। যার চেষ্টা ও সংগ্রাম যতটা বেশি হবে, লক্ষ্য অর্জনে যার দৃঢ়তা যত বেশি থাকবে, তার সফলতাও ততটা আকাশচুম্বী হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর এই যে, মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে।

(সুরা আন নাজম, আয়াত : ৩৯)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি যা পরিণতি ভোগ করবে তা তার কৃতকর্মেরই ফল। চেষ্টা সাধনা ছাড়া কেউ-ই কিছু লাভ করতে পারে না। (কুরতুবী)

মহান আল্লাহকে পেতে হলেও তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতিতে চেষ্টা-সাধনা করতে হবে। যারা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা-সাধনা করবে, মহান আল্লাহই তাদের সঠিক পথ বাতলে দেবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করবে, তাদের আমি আমার পথ দেখাব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীল লোকদের সঙ্গে রয়েছেন। ’ ( সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একনিষ্ঠভাবে তাদের সর্বোচ্চ পরিশ্রম দেয়, মহান আল্লাহ তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন না। বরং তিনি তাদের সুপথ দেখান এবং তাঁর দিকে যাওয়ার পথ তাদের জন্য খুলে দেন। তারা তাঁর সন্তুষ্টি কিভাবে লাভ করতে পারে তা তিনি প্রতি পদে পদে তাদের জানিয়ে দেন। এই আয়াতের তাফসিরে ফুদাইল ইবনে আয়াদ বলেন, যারা বিদ্যার্জনে ব্রতী হয়, আমি তাদের জন্য আমলও সহজ করে দিই। (বাগভী)

এ কারণেই মুমিনরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় পুণ্যের কাজে অধিক আত্মনিয়োগ করেন। এবং আল্লাহকে পেতে তাঁরা পুণ্যের কাজে এতটা চেষ্টা-সাধনায় লিপ্ত হন যে তা প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁদের এই চেষ্টাকে মহান আল্লাহ ভীষণ পছন্দ করেন, তাই তো মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এর বিনিময়ে তাঁদের জন্য পুরস্কারও রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। ’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৬)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আর যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে, তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৯)

অর্থাৎ বান্দার কোনো চেষ্টাই বিফলে যায় না। এটা আল্লাহর রীতি। কেউ আখিরাত পাওয়ার আশায় চেষ্টা করলে তিনি যেমন তাদের আখিরাতের সফলতা দান করেন। আবার কেউ দুনিয়ার কোনো সফলতা অর্জনের জন্য চেষ্টা করলেও তিনি তাদের নিরাশ করেন না। পৃথিবীর এই ক্রমবর্ধমান উন্নতির পেছনে বহু মনীষীর চেষ্টা-সাধনা রয়েছে। সঠিকভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে চেষ্টা করলে দুনিয়ার পার্থিব বিষয়েও সফলতা পাওয়া যায়।

তাই কখনোই কোনো কাজে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, বরং কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে চেষ্টা-সাধনা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ মানুষ চেষ্টা-সাধনা করতে পারে, কিন্তু তা পূরণের মালিক আল্লাহ। মহান আল্লাহ মানুষকে চেষ্টা অব্যাহত রাখার আদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর বলুন, তোমরা (নেক) কাজ করতে থাকো, আল্লাহ তো তোমাদের কাজকর্ম দেখবেন এবং তাঁর রাসুল ও মুমিনগণও। আর অচিরেই তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর নিকট, অতঃপর তোমরা যা করতে তা তোমাদের জানিয়ে দেবেন তিনি। (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৫)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যদি কিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে কিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপণ করে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৮১)

অর্থাৎ তখনো হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সুযোগ থাকলে তখনো নেক কাজের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে, মহান আল্লাহ তাদেরই সফল করবেন।

আপনার মতামত জানান