ধীরে ধীরে খ’সে পড়ছে শিশির

প্রকাশিত



সুন্দর একটা সময়। হেমন্তের দিনগুলো বরাবরই এমন সুন্দর হয়। উপভোগ্য হয়। রাতগুলোও তা-ই। কিছুদিন ধরে প্রকৃতিতে এই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন ভোর রাতে শীত শীত অনুভূতি হয়। ঠা-া অত পড়ে না। তবে হালকা কাঁথা বা কম্বল গায়ে জড়িয়ে নিলে বেশ লাগে। আর দিনের বেলায়, হ্যাঁ, যথানিয়মে উঠছে সূর্য। তবে রোদটা আগের মতো তীব্র নয়। গায়ে জ্বালা ধরায় না। বরং এক ধরনের আরাম দেয়।

এটাই আসলে হেমন্ত। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুই মাস হেমন্তের কাল। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কখনও গরম। কখনও শীত। আর মাঝখানের সময়টা বিশেষ নাতিশীতোষ্ণ, অর্থাৎ হেমন্ত কাল। এরই মাঝে প্রথম মাস কার্তিকের কিছুদিন গত হয়েছে। এরই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রকৃতিতে।
হেমন্তের প্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য শিশির। গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে অনেক আগে থেকেই শিশির ঝরছে। কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘ধরার আঁচল ভরে দিলে প্রচুর সোনার ধানে।/দিগঙ্গনার অঙ্গন আজ পূর্ণ তোমার দানে।’ সেই পূর্ণতা নিয়ে এসেছে হেমন্ত। জমিতে এখন আগাম আমন ধান। এবং ধানের সরু পাতায় টলমলে শিশির বিন্দু।

ধানের ডগা বেয়ে স্বচ্ছ জলের বিন্দু মাটিতে পড়ছে। নরম হচ্ছে মাটি। সেখানে পা ফেললে অদ্ভুত ঠা-া। কুয়াশার বুননও ক্রমে ঘন হচ্ছে। সকালে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। দূরের অনেক কিছুই কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।

বাইরের জেলাগুলোতে তো বটেই, ঢাকায়ও ঝরতে শুরু করেছে শিশির বিন্দু। রাজধানীর মানুষজন সাধারণত খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন না। উঠলে অপরূপ এ দৃশ্য ঠিক দেখতে পাবেন। কংক্রিটের নগরীতে ধানখেত নেই। তবে পার্কে উদ্যানে গাছ আছে। গাছের পাতায় রাতভর শিশির ঝরছে।

কাছ থেকে দেখতে চাইলে একটু নুয়ে ঘাসের দিকে তাকান। নিজের ভেতরটাই সতেজ হয়ে যাবে। খালি পায়ে ঘাস কিছুটা মারাতে পারেন। এ অনুভূতিটাও দারুণ এবং শিহরণ জাগানিয়া। সর্বোপরি শিশির বিন্দুর ওপর সূর্যের আলো এসে পড়তেই হিরকখ-ের মতো চিকচিক করছে।

দৃশ্যমান হচ্ছে হালকা কুয়াশাও। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে একটু বের হলেই কুয়াশার দেখা মিলছে। তবে এখনও হালকা বুনন। বাসার ছাদ থেকে দূরে তাকালে অনেক উঁচু ভবনও দেখা যায় না। এই কুয়াশার জাল, এই শিশির কণা দেখে জীবনানন্দের প্রিয় পঙ্ক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে কবি লিখছেন, ‘পাণ্ডুলিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি/নিস্তব্ধ ছিলাম ব’সে;/শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরও…।’
এখন থেকে যত দিন যাবে ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে তত বাড়তে থাকবে ঠা-র অনুভূতি। এভাবে শীতকে হাতে ধরে নিয়ে আসবে হেমন্ত। আপাতত সেই অপেক্ষা।

আপনার মতামত জানান