তাদেরকে দান করুন
আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ বাস করে, যারা অভাব থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে মুখ ফুটে কিছু চায় না। গায়ে পরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড় মুখের কষ্ট লুকানো হাসি দেখে আমরা তাদের সচ্ছল মনে করি; কিন্তু বাস্তবে তারা ভীষণ কষ্টে দিন পার করেও কাউকে লজ্জায় কিছু বলতে পারে না। অভাবের তাড়নায় বহু প্রয়োজনকে কবর দিয়েও নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের লোকদের সাহায্য করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘দান-খয়রাত ওই সব লোকের জন্য, যারা আল্লাহর কাছে আবদ্ধ হয়ে গেছে, জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফেরা করতে সক্ষম নয়। তাদের সাবলীল চলাচলের জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবহীন মনে করে। তুমি তাদের তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা লোকদের কাছে নাছোড় হয়ে ভিক্ষা করে না। এবং তোমরা বৈধ সম্পদ থেকে যা ব্যয় কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যকরূপে অবগত। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৩)
কিছু কিছু তাফসিরবিদের মতে, উল্লিখিত আয়াতে মূলত মুহাজিরদের কথা বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর দ্বিনের জন্য মক্কা ও সব সম্পদ ত্যাগ করে এসেছিলেন। বিজ্ঞ আলেমদের মতে, বর্তমান যুগে ওই লোকদেরও সহায়তা করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যারা দ্বিন শিক্ষা ও প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের উপার্জনের উৎস নেই বা থাকলেও তা খুব নগণ্য। এ ধরনের লোকদের পোশাক-পরিচ্ছেদ, কথা-বার্তায় বোঝা যায় না যে তারা কতটা কষ্ট করে দ্বিন শিক্ষা ও প্রচারে লেগে আছে, একটু খোঁজ-খবর নিলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
আবার আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা মধ্যবিত্তের সমাজে বাস করছে, তাদের দেখে সবাই মোটামুটি সচ্ছল মনে করে। কিন্তু বাস্তবে তারা অভাব-অনটনে জর্জরিত। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, সন্তানদের শিক্ষাভার চালানোর ক্ষমতা নেই। দুবেলা ঠিকমতো খাবার জোগানো সুঃস্বাধ্য তাদের জন্য। কিন্তু তারা তা কাউকে বুঝতে দিতে চায় না। এ ধরনের লোকদের সদকা করাও সবচেয়ে উত্তম সদকা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ায় এবং দু-এক গ্রাস খাবার বা দু-একটা খেজুর ভিক্ষা নিয়ে ফিরে যায় তারা (প্রকৃত) মিসকিন নয়। এ কথা শুনে সাহাবীরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাহলে মিসকিন কে? (উত্তরে) তিনি (সা.) বলেন, মানবীয় মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর মতো সামর্থ্য যার নেই আর সমাজের মানুষও তাকে অভাবী বলে জানে না, যাতে তাকে দান করতে পারে এবং সে নিজেও (মুখ খুলে) কারো কাছে কিছু চায় না। ’ (এ ব্যক্তি হলো প্রকৃত মিসকিন অর্থাৎ আর্থিক অনটনভুক্ত গরিব ভদ্রলোক)। (মুসলিম, হাদিস : ২২৮৩)
আর সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকা করার ফজিলত অপরিসীম। যারা আল্লাহর নির্দেশনা মেনে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, মহান আল্লাহ তাদের দানের প্রতিদান তাদের বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন। উপরন্তু তাদের ইহকালীন ও পরকালীন নিরাপত্তা দান করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের মাল রাতে ও দিনে, প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে থাকে, তাদের জন্য সেই দানের সওয়াব তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে এবং তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৪)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের সমাজে যারা প্রকৃত অভাবী রয়েছে, আমরা যদি গোপনে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারি, ইনশাআল্লাহ আমরাও এই পুরস্কারের ভাগিদার হতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে দান-সদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন
আপনার মতামত জানান