পুলিশ তো কোনো চাকরি নয়: এসপি নাবিলা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জামপুরের মেয়ে নাবিলা জাফরিন রীনা। একজন নারী হলেও কখনো পেশাগত কাজে নিজেকে পিছিয়ে রাখেননি। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রসিকিউশন) হিসেবে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয় বছর ধরে একই পদে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তার কর্মজীবন নিয়ে আলাপকালে জীবনের নানা দিক ও পেশাগত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন এসপি রীনা। তার বাবা পিডব্লিউডিএ’র সাবেক কর্মকর্তা মৃত মো. বজলুর রশীদ ভুঁইয়া ও সামসুন্নাহারের একমাত্র কন্যা তিনি। মা সামসুন্নাহার এখন রীনার সঙ্গেই থাকেন।
ছোট বেলায় ছয় মাস বয়স থেকেই ঢাকার গোড়ানে বসবাস করেন তিনি। এখনো পরিবার নিয়ে গোডানেই থাকেন তিনি।
রীনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে হিসাববিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে ২১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালের জুন মাসে এএসপি হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন সিআইডিতে।
দায়িত্ব পালন সম্পর্কে তিনি বলেন, চাপ নেই, আমার অফিসার যারা ছিলেন তারা সবাই খুবই ভালো অফিসার ছিলেন। নুরুজ্জামান স্যার, বর্তমান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্যার, এরপর আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার যিনি হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন। সবার অত্যন্ত ভালো ছিলেন। হাবিবুর রহমান স্যারের কথা তো আর বলার প্রয়োজন নেই। এরকম শান্ত হেল্পফুল একজন মানুষ কীভাবে ঠাণ্ডা মাথায় এতকিছু সামলান তা দেখে আমরাও অবাক হই।
তিনি বলেন, চাকরিতে ১৯ বছর পার করেছি। ২০১৩ সালের প্রথমে একবছরের ট্রেনিংয়ের জন্য রাজশাহীর শারদায় ছিলাম। এরপর ছয় মাসের প্রবেশনার ট্রেনিং করি সিরাজগঞ্জে। তারপর সিআইডি ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিলাম। তারপর মিশনে গেলাম। মিশন থেকে ফিরে ২০০৯ সালে এসপি অ্যাডমিন হিসেবে সিআইডি হেড কোয়ার্টারে যোগদান করলাম। এরপর সিআইডির অ্যাডিশনাল হিসেবে এসপি ময়মনসিংহ জোনে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ছিলাম। এরপর এসপি হয়ে ঢাকা রেঞ্জে এই পোস্টে কাজ করছি। এই পোস্টে আমিই প্রথম দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং নারী। চাকরিতে ১৯ বছর তো পার হয়েছে বাকি সময়টাও পার হয়ে যাবে।
রীনা বলেন, ১৩টি জেলার মোট ৯৬টি থানার দায়িত্ব আমার দপ্তরে। ১৩টি জেলার কোন কর্মকর্তা বা দায়িত্বরত কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তবে সেটি এই টেবিলে চলে আসে। অভিযোগ পেলে সেটি আমরা নির্ভরযোগ্য কাউকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে যদি অপরাধী হয় তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই আর নির্দোষ হলে অভিযোগ মুক্ত হন সেই কর্মকর্তা। প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে সেগুলো আমরা তদন্ত করছি তবে সফলতা এই যে, পেন্ডিং কোনো ফাইল আমার টেবিলে নেই।
তিনি বলেন, পরিবার থেকে কোনো বাধা তো ছিলই না বরং আমার বাবা যিনি আমার আদর্শ তিনি আমাকে কখনো মেয়ে হিসেবে চিন্তা করেননি। আমার তিন ভাই এক বোন। বাবা আমাকে সন্তান হিসেবে মানুষ করেছেন ছেলে-মেয়ে বিভেদ করেননি। আমার বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল পুলিশ হবো, তার স্বপ্নে আমি আজ এখানে এসেছি। পরিবার যদি সাপোর্ট না করে তাহলে তো কোনো কিছু করা সম্ভব নয়, আমার পরিবারের সবাই, আমার সন্তানরাও অনেক হেল্পফুল। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। আমার মা ও ভাইয়েরা সবাই আমাকে হেল্প করেন। স্বামী অসম্ভব হেল্পফুল একজন মানুষ। তিনি যেকোনো বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেন। চাকরির ক্ষেত্রে আমি কখনোই বাধার সম্মুখীন হইনি।
এসপি রীনা আরও বলেন, আমি অনেককেই জিজ্ঞাসা করি, আপনি কি কখনো কোনো জায়গায় গিয়ে কারো কাছে টাকা পয়সা ছাড়া সাহায্য পেয়েছেন? চিকিৎসকের কাছে যাবেন ফি দিতে হবে, মামলার করেছেন উকিলের কাছে যাবেন তিনি টাকা ছাড়া মামলা লড়বেন না। কিন্তু পুলিশই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে আপনি সেবা পাবেন কোনো বিনিময় ছাড়া। পুলিশ তো কোনো চাকরি নয়, এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আর সেবার মন মানসিকতা নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।
আপনার মতামত জানান