যে ৯ খাবারে পেতে পারেন দীর্ঘায়ু
বেশি দিন বাঁচতে কে না চান? প্রায় সবারই বাসনা আরও কটা দিন বেশি বাঁচার। খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই দীর্ঘায়ু পেতে চাইলে সুষম খাবার খেতে হবে। সঠিক খাবার গ্রহণের ফলে সেটি শরীরে ইতিবাচক শক্তি প্রদান করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং দৈহিক তৎপরতার উন্নতি করে। এতে করে সার্বিকভাবে ভালো থাকা যায়।
দীর্ঘায়ু পেতে যা খাবেন-
১. ডুমুর বা আঞ্জির
আমাদের দেশে সাধারণত এ ফলটি শুকনো রূপে পাওয়া যায়। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-কে, জিংক, আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ সঠিক রাখতে সহায়তা করে এবং খাবার সঠিকভাবে হজমে সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। ডুমুরে ওমেগা ৬, ওমেগা ৩ এবং ফিনলের মতো ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি রয়েছে, যা অন্ত্রের গতিবিধি নিশ্চিত করে এবং হার্টের অসুস্থতার ঝুঁকি কমায়।
২. ব্রকোলি
ব্রকোলি হচ্ছে বাঁধাকপি পরিবারের একটি সদস্য। এতে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান। হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের খুব ভালো প্রতিকার হিসেবে এটি কাজ করে। এটিকে সালাদ, স্যুপ বা কাঁচাও খাওয়া যায়। এটি ভিটামিন ‘কে’র ভালো উত্স এবং এটি নারীদের অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩. আপেল
আমাদের দেশের পরিচিত ফলগুলোর তালিকায় আপেল অন্যতম। কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করে এ ফলটি। উচ্চফাইবার এবং পানিতে পরিপূর্ণ এ ফলটি হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতেও অনেক কার্যকরী। এতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার বা পেকটিন ও ম্যালিক অ্যাসিড হজমশক্তি বাড়ায় এবং মলকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই অন্ত্রের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এতে পলিফেনলসের উপস্থিতি থাকায় এটি ডায়াবেটিস নিরাময় করে এবং অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের টিস্যুগুলোর ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে। মানবদেহের বিটা কোষগুলো ডায়াবেটিসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটির প্রতিকার হিসেবে নিয়মিত আপেল খাওয়া হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
৪. গ্রিন টি
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও পুষ্টিগুণে ভরপুর স্বাস্থ্যকর পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রিন টি। মেদ কমানোর অন্যতম পরিপূরক হিসাবে এবং মানবদেহের বিপাককে ত্বরান্বিত করতে এটি অনেক পরিচিত। এতে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর উপস্থিতির কারণে এটি ক্যানসার কোষ বিকাশের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। এতে থাকা কেটচিন নিউরনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। ফলে এটি মস্তিষ্কের রোগগুলি নিরাময়েও অনেক কার্যকরী।
৫. স্পিরুলিনা
এক ধরনের সায়ানোব্যাক্টেরিয়া নীল-সবুজ শৈবাল পরিবারের সদস্য স্পিরুলিনায় বিভিন্ন উপকারী পুষ্টি উপাদান, যেমন- প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন ও তামা রয়েছে। যে কোনো ধরনের পোড়ার প্রদাহ প্রতিরোধ করতে এটি অনেক কার্যকরী। এ ছাড়া এটি হাঁচি, চুলকানি ও স্রাবসহ অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। স্পিরুলিনা মানবদেহে নিম্ন রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
৬.হলুদ
হলুদ মানবদেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর উত্পাদনকে ত্বরান্বিত করে। এতে থাকা এলডিএল-কোলেস্টেরল, রক্তের গ্লুকোজ এবং রক্তচাপ হ্রাস করার মাধ্যমে হতাশা ও উদ্বেগ নিরাময় করতে সহায়তা করে। এটি কার্যকরভাবে আরওএসের উত্পাদন হ্রাস করে এবং সেরেব্রোভাসকুলার এন্ডোথেলিয়াম কর্মহীনতার বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।ফলে মানবদেহে বার্ধক্যের পুরো প্রক্রিয়াটিকে ধীর করতে সহায়তা করে।
৭. রসুন
মানবদেহের জন্য রসুন অনেক উপকারী। এতে থাকা সক্রিয় যৌগগুলো রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে এবং শরীরের ব্যথা ও সাধারণ সর্দিভাব হ্রাস করতে পারে। সকালে খালি পেটে প্রতিদিন রসুনের দুটি কোয়া খাওয়া অনেক উপকারী।
৮. আমলকী
আমলকী ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম উত্স। বেশ কয়েকটি আয়ুর্বেদিক ঔষুধি গুণাবলি এতে রয়েছে। তবে চুল, ত্বক, চোখ এবং পাচনতন্ত্রের জন্য এটি অনেক বেশি উপকারী। সকালে খালি পেটে প্রতিদিন একটি আমলকী খাওয়া অনেক বেশি কাজে দেয়। এ ছাড়া এক চামচ আমলা পাউডারও বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯. মিষ্টি তুলসি
এটি একটি জনপ্রিয় মিষ্টি-স্বাদের উদ্ভিদ। মূলত এটি মধুজাতীয় পানীয় এবং চায়ের সঙ্গে খাওয়া হয়ে থাকে। এটিকে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটির মিষ্টিযুক্ত বৈশিষ্ট্য থাকলেও এতে শর্করা বা ক্যালরি থাকে না এবং ইনসুলিন প্রতিক্রিয়াতেও এটি কোনো প্রভাব ফেলে না।
এসব প্রাকৃতিক খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। শরীর নিরোগ থাকে। এতে করে বেশি দিন বাঁচার আশা করা যায়।
সূত্র: যুগান্তর।
আপনার মতামত জানান