ভাইদের পারষ্পরিক সংঘাত জঘন্য পাপ
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের তিন দশক অতিক্রম না করতেই মুসলিম বিশ্বে ভ্রাতৃসংঘাতের সূচনা হয়, যা এখন পর্যন্ত চলমান। ইসলামবিরোধী নানা সংঘ, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র এবং ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মুসলিম জাতির বিমুখতা এসব সংঘাতের পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে এবং করছে। অথচ ইসলাম ভ্রাতৃসংঘাতের মতো আত্মঘাতী কাজকে প্রথম থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মুসলমানের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা : কোনো ধরনের সংশয় ও মতবিরোধ ছাড়াই প্রমাণিত—শরিয়তে এক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের রক্তপাত হারাম বা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম সর্বতোভাবে হারাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)
হত্যাকাণ্ড কুফরির পথ দেখায় : কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে, এক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমকে হত্যা করা কবিরা গুনাহ এবং তা কুফরির দিকে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েছেন। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন—আজকের এই দিন, এই মাস ও এই শহর তোমাদের জন্য সম্মানিত। উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন এসব কথা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭)
জাহিলি যুগে ভ্রাতৃসংঘাতের চিত্র : ইসলামপূর্ব জাহিলি আরবে একটি উটকে কেন্দ্র করে দুটি গোত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের এই সংঘাত অব্যাহত ছিল ৪০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে। একটি উটের জন্য বনু বকর ও বনু তাগলিবের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল ‘হারবুল বাসুস’। এমন দুটি সম্প্রদায় যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, যারা সম্পর্কে পরস্পরের চাচাতো ভাই। প্রবৃত্তি, শত্রুতা, বিদ্বেষ তাদের পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল, দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। ইসলাম আগমনের আগে মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে বহু বছর যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ইহুদিরা তাদের মধ্যে যুদ্ধের আগুন উসকে দিত। তারা একেক সময় একেক গোত্রের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে বিজয়ী হতে সাহায্য করত। ইহুদি গোত্রগুলোর কতক আউসের মিত্র আর কতক খাজরাজের মিত্র ছিল।
ভ্রাতৃসংঘাত কুফরিতুল্য অপরাধ : বিদায় হজে পারস্পরিক সংঘাত ও বিবাদের মাধ্যমে জাহিলি যুগে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পর তোমরা কুফরির দিকে ফিরে যেয়ো না—যে তোমরা একজনের ঘাড়ে অপরজন আঘাত করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৭৭)
হাদিসের অর্থ হলো—কোনো মুসলিমকে আঘাত করা কুফরিসদৃশ কাজ বা তা কুফরির দিকে নিয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি (পাপ) আর তাকে হত্যা করা কুফরি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৭৬)
আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন দুজন মুসলিম পরস্পরের দিকে তরবারি ওঠায়, তখন হত্যাকারী ও নিহত উভয়ে জাহান্নামে যাবে। সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! হত্যাকারীর বিষয়টি ঠিক আছে; কিন্তু নিহত ব্যক্তি? তিনি বলেন, কেননা সে তার সঙ্গীকে হত্যার ইচ্ছা পোষণ করত।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪১২২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু হত্যাকেই নিষিদ্ধ করেননি, বরং হাসির ছলেও কোনো মুসলিমের দিকে অস্ত্র দিয়ে ইঙ্গিত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তাঁর ভাইয়ের দিকে অস্ত্র উঠিয়ে ইশারা না করে। কেননা সে জানে না হয়তো শয়তান তার হাতে ধাক্কা দেবে এবং সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭০৭২)
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ
আপনার মতামত জানান