সোনারগাঁয়ে পরিকল্পনা করে বাসা ভাড়া নিয়ে বৃদ্ধাকে খুন, স্বর্ণালঙ্কার-টাকা লুট
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁ থানাধীন ঝাউচরে এক বাড়ির মালিককে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর স্ত্রীকে হাত পা বেঁধে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করে পালিয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। এ ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- সুমন ও শিপন। এর আগে ওই বৃদ্ধার বাড়ির এক ভাড়াটিয়া দম্পতিকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি।
সোমবার (১৭ মে) দুপুরে ওই ঘটনায় দুই দফায় চারজনকে গ্রেফতারের পর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা ও ময়মনসিংহ) ইমাম হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত ৮ মে সোনারগাঁও থানার ঝাউচর এলাকায় একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির পরদিন অচেতন অবস্থায় বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিন (৭০) ও তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে (৬৪) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে হোসনে আরা বেগম হাত-পা বাঁধা ও মুখে স্কচটেপ পেচানো অবস্থায় ছিলেন। তাদের হাসপাতালে নেয়ার পর আজিম উদ্দিনের জ্ঞান ফিরলেও স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এই ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় আজিম উদ্দিনের ছেলে আল আমিন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি।
ঘটনার পর বৃদ্ধের এক ভাড়াটিয়া দম্পতিকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা হলেন- হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তারা পালিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর যান। গত ১২ মে গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, ‘জবানবন্দিতে হারুন অর রশীদ ও সুলতানা খাতুন দম্পতি স্বীকার করেছেন তারা একটি ডাকাত চক্রের হয়ে নারায়ণগঞ্জের ওই বৃদ্ধার বাড়িটি ভাড়া নেন। এর মূলহোতা শিপন ও সুমন। যারা ওই বাড়িটি আগেই রেকি করেছিলেন। তারা নিজেরাই ভাড়া নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাড়িওয়ালা আজিম উদ্দিন তাদের ভাড়া দেননি। এরপর এই দম্পতিকে নিয়ে আসেন তারা।’
তিনি বলেনন, ‘হত্যাকাণ্ডের চারমাস আগে আজিম উদ্দিনের বাড়ি ভাড়া নেন হারুণ অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে প্রায়ই চা খাওয়াতেন হারুনের স্ত্রী সুলতানা। আজিম উদ্দিনও তাদের কাছে যেতেন। তবে আজিম উদ্দিনের স্ত্রী কখনো যেতেন না। এমনকি তিনি আজিম উদ্দিনকেও নিষেধ করতেন।’
‘গত ৭ মে রাতে বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনকে প্রথমে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান হারুনের স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তবে তিনি অচেতন না হওয়াতে ওই রাতে তারা ডাকাতি করতে পারেননি। পরের দিন ৭ মে ফের চা খাওয়ান তাকে। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রাতে ডাকাত চক্রের মূলহোতা শিপন ও সুমন ওই বাড়িতে যান। ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। তার মুখও গামছা দিয়ে বেধে ফেলেন। এরপরও তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করলে লাইট বন্ধ করে স্কচটেপ দিয়ে তার মুখোমন্ডল পেচিয়ে ফেল ডাকাতি করে পালিয়ে যান। সেসময় বাইরে হারুনের স্ত্রী পাহারায় ছিলেন।’
ইমাম হোসেন বলেন, ‘মূল পরিকল্পনাকারী শিপন ও সুমন। টোপ হিসেবে হারুন অর রশীদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুনকে ব্যবহার করেছেন তারা। শিপন ও সুমনকে ১৬ মে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা জানিয়েছেন, হারুনকে ডাকাতির ১১ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিছু নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেছে তা উদ্ধারে কাজ চলছে। তবে বাড়িটি থেকে কী পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছে, তা নিহতের পরিবারের কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।’
আজিম উদ্দিনের ১৮/২০টি টিনের ঘর, তাই ডাকাতদের ধারণা ছিল অনেক টাকা পাবে। এ ধারণা থেকেই তারা বাড়িতে ডাকাতি করে। হত্যায় চারজন জড়িত ছিল। চারজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইমাম হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা হত্যার ২০ দিনের মাথায় আসামিকে গ্রেফতার করেছি। দ্রুত এর চার্জশিট দেয়া হবে। দ্রুত বিচার হলে অপরাধীরা ভয় পাবে, তারা বুঝতে পারে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ১০/১২ লাখ বাড়িওয়ালা, তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। কাদের ভাড়া দেয়া হয়, ভাড়াটিয়া কেমন এসব খেয়াল রাখতে হবে।’
আপনার মতামত জানান