বিএনপির ফাঁদে জাতীয় পার্টি, দ্বন্ধে আ’লীগ
সোনারগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি’র ফাঁদে পা দিয়ে প্রার্থী ঘোষনা দিয়েছে জাতীয় পার্টি। সোনারগাঁ উপজেলায় জাতীয় পার্টির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে বিএনপি আর নিজেদের দ্বন্ধে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগ। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে ভোটের মাঠে গরম বাতাস বইতে শুরু করেছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সমীকরনের হিসাব নিকাশ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের স্বার্থচারিতার কারনে এ আসন থেকে বিনা ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হলেও জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে তিনি ঝুকে যান বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দলছুট কর্মীদের দিকে। বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে জ্বালাও, পোড়াও, হামলা ও মামলার আসামী পদধারী বিএনপি নেতাদের তার দলে ভিরাতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা এবং মামলার আসামী হয়েও নির্বিঘ্নে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা দিয়ে তাদের জাতীয় পার্টিতে টানতে সক্ষম হন। করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সকল সহায়তা যায় বিএনপি’র নেতা কর্মীদের ঘরে আর অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে যখন বিএনপি নেতারা বঙ্গবন্ধুর ব্যাচ লাগিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিকে ফুল দিতে যায়, তখন বুকে যে ব্যাথা অনুভব করি, তা কাউকে বলতে পারি না। যে জিয়া বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করতে হত্যা পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিল তারাই এখন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে মুছকি হাসে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগের কোন্দল এবং জাতীয় পার্টির কর্মীহীনতার সুযোগে পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে বিএনপি। তাদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল জাতীয় পার্টি থেকে এমপির সহধর্মীনিকে নির্বাচনে আনা সফল হয়েছে। দ্বিতীয় পরিকল্পনা মেয়র সাদেককে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়া। এখন তৃতীয় পরিকল্পনায় সামনে এগুচ্ছে তারা। জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্ববায়ক কমিটির সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দেয়ার ব্যবস্থা। যদি তা না হয় তাহলে আওয়ামী লীগ থেকে দুর্বল প্রার্থীর জন্য যে কোন মূল্যে নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করা। তৃতীয় পরিকল্পনা সফল হলেই পৌরসভায় বিএনপির মেয়র নিশ্চিত।
সুত্রমতে বিএনপি নেতারা স্বার্থ এবং দাপটের সঙ্গে চলাফেরার জন্য জাতীয় পার্টিতে আসলেও তাদের ভোট রেখে এসছেন ধানের শিষের সিন্দুকে। তারা এখন শুধু তাদের পরিকল্পনামতো এগুচ্ছেন। প্রার্থী কে হবেন সে খবর থাকছে পর্দার আড়ালে। তাদের টার্গেট মেয়র এবং সব ক’টি কাউন্সিলর। যেহেতু জাতীয় পার্টির যোগ্য কোন প্রার্থী নেই সেই সুযোগে তারা ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে থাকবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোট যেহেতু ইবিএম পদ্ধতিতে হবে সেহেতু এখানে দল কোন ফ্যাক্টর হবে না। ফেক্টর ব্যক্তি ইমেজ। আওয়ামী লীগ থেকে দুর্বল প্রার্থী দিয়ে কোন্দল চাঙ্গা করে রাখলে আওয়ামী লীগের বিরাট একটা অংশ প্রতিবারের মতো এবার নৌকা ঠেকাতে কাজ করবে। ডালিয়া লিয়াকতের নামের সাথে যেহেতু বহিরাগত তকমা পড়ে গেছে সেহেতু সচেতন পৌরবাসী তাকে এড়িয়ে যাবে এমনকি খোদ বিএনপির ভোট বঞ্চিত হবেন তিনি। তাহলে পৌরসভায় থাকে কে? সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মহসিন সাহেবের ছেলে মোশারফ হোসেনের গ্রহন যোগ্যতা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়, নাম আসছে সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রুমা আক্তারের। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কনফিডেন্স এতোই বেশি যে, তাদের বিশ্বাস আওয়ামী লীগের যে ভোট ছুটে যাবে সেগুলো তাদের বাক্সে পড়বে, তাদের রিজার্ভভোট তো আছেই। বিএনপি থেকে যে ই ধানের শিষ আনবে তার বিজয় নিশ্চিত হবে যদি আওয়ামী লীগ থেকে দুর্বল প্রার্থী দেয়া যায়।
অন্যদিকে সুকৌশলে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগকে কয়েকভাগে বিভক্ত করে রেখেছেন। ইতিমধ্যে আহবায়ক কমিটি দিয়ে সে বিরোধ চাঙ্গা করে রেখেছেন। জনপ্রতিনিধি ঐক্য ফোরামের যেসব চেয়ারম্যান গত নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন তারা যদি লাঙ্গল নিয়ে ইউনিয়ন নির্বাচন না করেন তবে তার ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যানদের জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
আপনার মতামত জানান