৮৬২ কোটি টাকার গ্যাস বিল দিচ্ছে না মেঘনাগ্রূপ

প্রকাশিত


নিজস্ব প্রতিবেদক

মেঘনা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রায় ৮৬২ কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া রেখেছে। দফায় দফায় চিঠি দিয়েও এই বিল আদায় করতে পারেনি তিতাস। যখনই তিতাস কর্তৃপক্ষ বিলের জন্য চাপ দিয়েছে তখনই মেঘনা তিতাসকে উল্টো চাপে ফেলেছে। যখনই যিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, তখনই তাকে চেয়ার হারাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আগে কেউ মেঘনার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে সাহস পাননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল মেঘনা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামালের। সেই সম্পর্ক ব্যবহার করে লুটপাট করেছেন তিনি।

মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এভারেস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ক্যাপটিভ কোম্পানি হিসেবে ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরু করে, যেটি উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রচলিত আছে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ওই প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, এই এভারেস্ট পাওয়ার লিমিটেডের কাছে তিতাসের পাওনা ৭৭০ কোটি টাকা। আর মেঘনা সুগার রিফাইনারির বকেয়ার পরিমাণ ৯২ কোটি টাকা।

একটি কোম্পানির কাছে এত টাকা আটকে থাকা দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ বকেয়ার কারণে তিতাস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি সমাধান হওয়া দরকার। আগে তারা বিভিন্ন সময় নানা প্রেশার গ্রুপ ব্যবহার করে পার পেয়েছে। এখন আমরা হার্ডলাইনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এসব বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে সখ্যের সুযোগে মেঘনা গ্রুপ চুক্তির মাঝপথে এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়িয়ে নিয়েছে। শুরুতে কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ মেগাওয়াট ছিল। তিন বছর পর ২০১৪ সালে ৫০ দশমিক ৭০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে ক্যাপটিভ থেকে স্মল আইপিপি হিসেবে রূপান্তরিত হয়ে যায় এভারেস্ট পাওয়ার। কেন্দ্রটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও মেঘনা ইকোনমিক জোনে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে দেওয়া বিদ্যুতের গ্যাসের বিল আইপিপি রেটে এবং বাইরে বিক্রি করা বিদ্যুতের অংশের গ্যাসের দাম ক্যাপটিভ রেটে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বিইআরসির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাপটিভ রেটে গ্যাস বিল দেয়নি।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ওই টিমের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত হাতে পেয়েছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা। সে সব তথ্যের ভিত্তিতে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মোস্তফা কামাল ও তার পরিবারের সব সদস্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অবরুদ্ধ করতে আদালতে আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। অবশ্য গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী ও গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি আক্তার এবং সন্তানদের ৩১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ৩০ দিনের জন্য ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ রাখার আদেশ চেয়ে শিগগিরই আদালতে আবেদন করবেন দুদক কর্মকর্তারা।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামাল ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার ১৩১ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১২৬ টাকার শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের পণ্য আমদানি করেছেন। তবে এ সময়ে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী ইনভয়েস মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৪৮ হাজার ৩৬৮ কোটি ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৩১১ টাকা। সে হিসাবে আমদানির আড়ালে অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে গোপনে ৭৯ হাজার ৭৬২ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৫ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

আপনার মতামত জানান