হেফাজতের মামলায় দুই সাবেক সাংসদ ও ৪ জন সাংবাদিকসহ ৬২ জনকে আসামি

প্রকাশিত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে হত্যার ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে হেফাজত ইসলামের সমর্থক ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করা হয়।

বুধবার সকালে সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল বারী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মাওলানা ইকবাল হোসেনের পরিবারকে না জানিয়ে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে এনামুল হক ইমরান। মঙ্গলবার রাতে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে স্ট্যাটাসে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ মামলায় অনেক নির্দোষ ও নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। তাদের নাম বাদ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের আসামি করার দাবি করেন।

মামলায় নারায়ণগঞ্জোর সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ও আবদুল্লাহ আল কায়সার, সাবেক পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জাবেদ পারভেজ, নারায়ণগঞ্জের ডিবির সাবেক ওসি মো. এনামুল কবির ও সোনারগাঁও থানার সাবেক ওসি মো. হাফিজুর রহমান এবং স্থানীয় ৪ জন গণমাধ্যমকর্মী সহ ৬২ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া আরো ১০০-১৫০ জন অজ্ঞাত আসামী করা হয়।

মামলায় হেফাজত ইসলামের সমর্থক ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী উল্লেখ করেন, কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক তার স্ত্রীসহ গত ২০২১ সালের ৩রা এপ্রিল রাতে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্ট হোটেলে অবকাশ যাপনের জন্য আসেন। ওই সময় দুই সাবেক সাংসদের ষড়যন্ত্রে পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এজহার নামীয় আসামীরাসহ ১শ’- দেড়শ আসামী মামুনুল হককে স্ত্রীসহ হেনস্তা করে রিসোর্ট থেকে বের করে দেয়। পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সোনারগাঁয়ের হেফাজত কর্মী মাওলানা ইকবাল হোসেন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় মামুনুল হককে স্ত্রীসহ হেনস্তার জোরালো প্রতিবাদ করেন। এসময় এজহার নামীয় আসামীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কিল, ঘুষিসহ লোহার রড দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আহত অবস্থায় তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করে। ওই সময় পুলিশ তাকে রিমান্ডের নামে পুলিশ নির্যাতন করে। নির্যাতনে মাওলানা ইকবাল হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করে।

তিনি ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল রাত ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি এজহারে আরো উল্লেখ করেন, ওই সময় বিরূপ পরিস্থিতির কারনে মাওলানা ইকবাল হোসেনের পরিবার মামলা করতে সাহস পাননি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় তার পরিবারের পক্ষে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে মামলার ঘটনায় নিহত ইকবাল হোসেনের ছেলে এনামুল হক ইমরান বলেন, আমি প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছি। আমার বাবাকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে কে বা কারা এটা করেছে আমি জানি না। তারা আমার কিংবা আমার পরিবারের সাথে কোন পরামর্শ না করেই মামলাটি দায়ের করেছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক নির্দোষ মানুষের নাম রয়েছে। এগুলো তারা ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে দিয়েছে। আমি এটার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই এবং এ মামলা প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাই। আপনারা প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেন আমাদের কোনো আপত্তি নাই। যারা নির্দোষ তাদের নাম বাদ দেন।

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল বারী বলেন, হেফাজত ইসলামের সমর্থক ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। তদন্তে মামলার কোন আসামির সম্পৃক্ততা না পেলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

আপনার মতামত জানান