সোনারগাঁয়ে মর্ডান গ্রুপের নদী দখল অব্যাহত

প্রকাশিত

ডেইলি সোনারগাঁ >>
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নুনেরটেক গ্রামের পাশে মেঘনা নদী দখলের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মর্ডান গ্রুপ নামের একটি কম্পানীর সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নিদের্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসেরন নির্দেশ অমান্য করে দখল অব্যাহত রেখেছে দখলদার কম্পানী।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী চরহাজী মৌজার প্রায় ২শত ৩০ বিঘা জমিতে গজারি গাছ ও বাঁশপুতে নদী, নদীর পাশের সরকারি জমি ও ব্যক্তিমালিকানা জমি জোড়পূর্বক অবৈধভাবে দখল করেছে মর্ডান গ্রুপ। স্থানীয় নুনেরটেক ও বারদীর প্রভাবশালীদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে কম্পানীর পক্ষে কৃষকদের কৃষি জমি জোড় পূর্বক দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

সরেজমিন নুনেরটেক গিয়ে দেখা যায়, দ্বীপাঞ্চল খ্যাত নুনেরটেকের চরহাজী মৌজার দুইপাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী, নদীর ফোরসোর লাইন, খাস ও মালিকানা জমির উপর ভেকু দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছে। ৫০-৬০ জনের একটি শ্রমিক দল নদীর পাড়ে তাবু তৈরি করে কাজ করছে। নদী তীরে সুরক্ষাদেয়াল তৈরির জন্য ইট, রড সিমেন্ট বালি জড়ো করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রডমিস্ত্রী জানান, আমরা সবাই শ্রমিক, মর্ডান কম্পানীর ডকইয়ার্ড তৈরির কাজ করছি। এখানে নদী থেকে বড় বড় জাহাজ যাতে উপরে উঠতে পারে তার জন্য স্লিপার তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য নদীর তীর থেকে প্রায় ২০০মিটার পর্যন্ত যেতে হবে অন্যথায় স্লিপার দিয়ে জাহাজ উঠানো সম্ভব হবে না।

ভুক্তভোগী কৃষক মোতালেব মুন্সী জানান, আমার নদীপাড়ের সাড়ে ছয় বিঘা, ভাইয়ের সাড়ে প্রায় দশ বিঘা জমি না কিনেই জোড়পূর্বক বাঁধ তৈরি করে দখলে নিয়েছে মর্ডান কম্পানী। এসিল্যান্ড এসে কাজ বন্ধ করার পর কম্পানীর পক্ষে এলাকার প্রভাবশালীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে এবং নাম মাত্র মূল্যে জমি বিক্রি করতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

চেঙ্গাকান্দী গ্রামের কৃষক ভ’ক্তভোগী চাঁন মিয়া জানান, তার প্রায় ৫ বিঘা জমি না কিনেই কম্পানী স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাহায্যে দখল করে নিয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের বাঁধা দিলেও তারা তা শুনেনি।

আব্দুস সাত্তারের ছেলে খাজা মিয়ার ৪ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ করেছেন তার আত্মীয়রা। খাঁজা মিয়া প্রবাসী হওয়ার আত্মীয় স্বজনের বাঁধা উপেক্ষা করে জমি দখল করে নিয়েছে। তারা জানান নুনের টেকের আবুল হাশেম ও বারদীর আলী হোসেনের নেতৃত্বে জমি দখল করছে মর্ডান কম্পানী।

এ ব্যাপারে কম্পানীর পক্ষে জোড় পূর্বক জমি দখলে অভিযুক্ত আবুল হাশেম বলেন, আমি কারো জমি জোড়পূর্বক দখলের সাথে জড়িত নই।

কম্পানীর প্রতিনিধি জলিল মিয়া জানান, আমাদের কাগজপত্র প্রসেসিংয়ে আছে। আমরা সরকারি খাস জমি ও নদী দখলের সাথে যুক্ত নই। তাহলে কাগজপত্র জমা দিয়ে অনুমতির অপেক্ষা না করে কনে নদীতে গজারি গাছ ও বাঁশ পুতে দখল করছেন প্রশ্ন শুনে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন জানান, নদী দখলে মর্ডান গ্রুপের সম্পৃক্ততা পেয়ে ডিমারগেশন লাইন টেনে লাল পতাকা উড়িয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হলেও কম্পানীর পক্ষে কেউ এখনো কোন প্রকার কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ না করেনি।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, আমি মাত্র সাতদিন হয় সোনারগাঁয়ে যোগদান করেছি। তবে মর্ডান গ্রুপের দখলের ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ইতোমধ্যে কম্পানীর সব ধরনে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার একইঞ্চি নদীও কাউকে দখল করতে দেয়া হবে না, এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে। যেসব কৃষকের জমি দখল কওে নিয়েছে তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তার জমি উদ্ধারে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করব।

আপনার মতামত জানান