সোনারগাঁয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা গ্রেপ্তার আতঙ্ক ও হুমকিতে ঘরছাড়া। ২০ ডিসেম্বর রোববার গভীর রাতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আল আমিন সরকারের নির্বাচনী অফিস পোড়ানোর ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলা আতঙ্কে পুরুষশূন্য পুরো এলাকা।
জানা যায়, নৌকার প্রার্থী আল আমিন সরকারের বড় ভাই বাচ্চু সরকার বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব সরকারের ভাই, ভাতিজা, সমর্থক এবং ডাঃ আব্দুর রউফ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে সহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোস্টার নামিয়ে ফেলা, প্রচারণা গাড়িতে হামলা, প্রচারণার কাজে বাধাসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান ডাঃ আব্দুর রউফ।
মামলার এজাহারে বাদী বাচ্চু সরকার অভিযোগ এনেছেন, গতকাল রবিবার রাতে মাহবুব সরকার ও ডাঃ আব্দুর রউফ চেয়ারম্যানের সমর্থকরা রাত ১টার সময় বেআইনীভাবে দামোরদী এলাকায় নৌকার অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেয়। তাতে বাঁশের তৈরি নৌকা, চেয়ার, পোষ্টার, ব্যানারসহ যাবতীয় জিনিস পুড়ে গেছে। উক্ত আসামিরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য পরিকল্পিতভাবে এমন কাজ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে ওই ঘটনার পর নৌকা প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘর ছাড়া। এ সুযোগে তাদের পোস্টার ও ফেস্টুন নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে স্থানীয় ভোটাররা ধারণা করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীসমর্থকদের অেিভাগ গত নির্বাচনেও আল আমিন সরকার নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে তৃতীয় হয়েছে। আনারস প্রতিক নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মাহবুব সরকার এবং ঘোড়া প্রতিকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ডাঃ আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবার পরাজয় এড়িয়ে কেন্দ্র দখল করে নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পরিকল্পণা অনুযায়ী তিনি আনারস ও ঘোড়া প্রতিকের সমর্থকদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব সরকার বলেন, আল আমিন সরকার পরাজয়ের আতঙ্কে নিজেদের নৌকা নিজেরা পুড়িয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েকদিন আগে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে আতঙ্কিত আমার কর্মী সমর্থকরা। আমার প্রচার কাজে বাধা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সকল পোস্টার-ফেস্টুন নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখানে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিকে হয়ে পড়েছে। এতে নির্বাচনের সমান্তরাল মাঠ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বলতে আর কিছুই নেই। অবিলম্বে এই অপতৎপরতা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ আব্দুর রউফ বলেন, পরিকল্পিতভাবে নিজেদের অফিস পুড়িয়ে আমার দুই সন্তানসহ কর্মী-সমর্থকদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও হামলা আতঙ্কে প্রচারণা চালাতে পারছি না। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, নৌকা প্রার্থীর অফিস পোড়ানোর ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাউকে অযথা হয়রানি না করে তদন্ত সাপেক্ষে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় কোথাও কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন বা অঘটন ঘটছে কিনা তা কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ২৬শে ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য প্রশাসন কাজ করছে।
আপনার মতামত জানান