সোনারগাঁয়ে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় প্রি-পেইড মিটার লাগাতে বাঁধা দেওয়ায় গ্রাহকদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, প্রি-পেইড মিটার বন্ধ ও বাংলা বাজারের দরিদ্র চা দোকানদার শাখাওয়াত হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে মানব বন্ধন করেছে এলাকাবাসী। আজ সকালে উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের বাংলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতশত নারী পুরুষ মানব বন্ধনে অংশ নেয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর নতুন প্রিপেইড মিটার স্থাপনে নানা রকম হয়রানি, অনিয়ম, মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চাজ বৃদ্ধির কারনে এটি গরীব মারার মিটার হিসেবে ইতোমধ্যেই পরিচিত। তাই গরিব অসহায় মানুষ এ মিটারের আতঙ্কে আছে। গত সোমবার এ এলাকায় প্রি-পেইড মিটার লাগাতে আসতে গরীব চা দোকানদার শাখাওয়াত হোসেন লাইনম্যানদেও বলেন,‘স্যার আমি গরিব মানুষ, এমনিতেই চলতে পারি না। আমার দোকানে পূর্বেও ডিজিটাল মিটারটি থাকুক, এটি লাগাবেন না। প্রি-পেইড মিটার সংযোগে বাঁধা দেয়ায় লাইনম্যানদের সাথে তার বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে সোমবার বিকালে সোনারগাঁ পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলায় শাখাওয়াতকে রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে।

শাখাওয়াতের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানিয়ে তারা জানান, প্রয়োজনে আমরা কঠোর কর্মসূচী গ্রহন করবো। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সরকার। জামাত-বিএনপি থেকে আসা কিছু অসাধু কর্মকর্তা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সাধারন মানুষের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের সাজানো মামলায় সাজানো শাকাওয়াতের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা প্রিপেইড মিটারের নানা অসংগতি, অনিয়ম ও হয়রানির কথা সবার কাছে তুলে ধরেন। তারা সরকারের কাছে অতিসত্বর এই প্রিপেইড মিটার লাগানো বন্ধ ও শাখাওয়াতের মুক্তির আহ্বান জানান। অন্যথায় ভবিষ্যতে আরো কঠোর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলেও জানান তাঁরা।

বাংলাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা জানান, প্রি-পেইড মিটারে প্রতিদিন টাকা রিচার্জ করলে প্রতিদিনই একমাসের সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়, তা সাধারন মানুষের জন্য জুলুম হয়ে যায়। রাক্ষুসী এ মিটারের বিরুদ্ধে সারাদেশের মানুষ যখন আন্দোলন করছে, সেখানে সোনারগাঁয়ের সাধারন গ্রাহকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার, হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোড়পূর্বক মিটার বসাতে বাধ্য করছে।

উল্লেখ্য যে, গত সোমবার (২৪ জুন) সকালে বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় লাইনম্যান রাহমাতুল্লাহ, আজগর আলীসহ ১২ জন কর্মকর্তা কর্মচারী ও লাইনম্যান মিটার প্র্রতিস্থাপনের জন্য ২০০ প্রিপেইড মিটার নিয়ে উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের বাংলাবাজার যায়। স্থানীয় লোকজন ওই এলাকায় প্রি-পেইড মিটার সংযোগ দিতে বাধা প্রয়োগ করেন। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন বে-আইনীভাবে লাইনম্যান সহ তাদের সবাইকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় প্রায় ৫ লাখ টাকার প্রি-পেইড মিটার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করে। পরে সুজন কুমার সরকার বাদী হয়ে ১২ জন গ্রাহকের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ১৫/২০ কে অজ্ঞাত দেখিয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলাদায়ের করেন। পরে সোমবার রাতে চা দোকানী শাখাওয়াতকে সোনারগাঁ পুলিশ গ্রেফতার কওে জেলা আদালতে প্রেরণ করে।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জোনাব আলী বলেন, আমাদের লোকজনকে মারধর ও ভাংচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানব বন্ধনে বক্তাদের মিথ্যা মামলার অভিযোগের পেক্ষিতে বলেন, পুলিশ তদন্ত করলেই সত্য মিথ্যা প্রমানিত হবে।

সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় একজনকে গ্রেফতার করে জেলা আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মতামত জানান