সোনারগাঁয়ের সাধক পুরুষ সৈয়দ হযরত শাহ্ ইব্রাহিম দানিশমান্দ

প্রকাশিত



বিশেষ প্রতিবেদক (ডেইলি সোনারগাঁ):
সৈয়দ হযরত শাহ্ ইব্রাহিম দানিশমান্দ একজন সাধক পুরুষ ছিলেন। বর্তমানে সাহেব বাড়ী নামে পরিচিত মোগরাপাড়ায় তার মাজার রয়েছে। হযরত শাহ্ ইব্রাহিম দানিশমান্দের সোনারগাঁয়ে আগমন ও বসবাস সম্পর্কে জানা যায়, মোগরাপাড়ায় মোগরা নামে এক দৈত্য বসবাস করতো। তাই মোগরা দৈত্যের নামে এই এলাকা বা পাড়া পরিচিত ছিল। মোগরা তার অনুগামীদের নিয়ে এখানে বসবাস করতো। কোন মানুষ এখানে আসতে পারতো না। ইসলামের শুরুতে অনেক রাজা এ দৈত্যের ওপর আক্রমন করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে সুলতান ফতেহ্ শাহের আমলে শাহ্ ইব্রাহিম দানিশমান্দ বাগদাদ থেকে এখানে আসেন এবং নিজের অলৌকিক শক্তি-বলে সে দৈত্যকে হত্যা করে দৈত্যদের অধিকার থেকে উক্ত স্থান মুক্ত করেন। ফতেহ আলী শাহ্ সোনারগাঁয়ে নিজের রাজধানী স্থাপন করেন এবং তাঁর বড় কন্যা রওশন আক্তার বানুকে হযরত ইব্রাহিম দানিশমান্দের সাথে বিয়ে দেন। তাঁর ঔরশে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তার নাম রাখা হয় খোন্দকার মুহাম্মদ ইউসুফ। অন্য একটি সুত্র থেকে জানা যায়, এই বিবাহের মধ্য দিয়ে খোন্দকার মুহাম্মদ ইউসুফ ছাড়াও সৈয়দ ইব্রাহিমের আরো তিন পুত্র ছিল: মুসা, ঈসা এবং ইসহাক। তাঁর পুত্র খোন্দকার মুহাম্মদ ইউসুফ সোনারগাঁয়ের প্রসিদ্ধ খোন্দকার। সোনারগাঁয়ে তার মাজার এখনো প্রসিদ্ধ। তাঁর বংশধরও আছেন সোনারগাঁয়ে।

সৈয়দ হযরত ইব্রাহিম দানিশমান্দ (রঃ) বাগদাদের প্রখ্যাত পীর হযরত শেখ শাহাবুদ্দিন সোহরাওয়ার্দী (রঃ) এর বায়েতকৃত মুলতানের পীর জাকারিয়া (রঃ) এর সতীর্থ পরবর্তী বংশীয়দের মধ্যে সম্রাট বাবুর হায়দারদের নিযাম, আফগান সম্রাটগণ বর্তমানে অবস্থানরত কানিগুরামে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ লাহোর (প্রাচীন জালানদর) এবং শামসবাদ (উত্তর প্রদেশ) তার বংশীয় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ । বাজেদ পীর রওশন (রঃ) জালালুদ্দিন (রঃ) এর বংশীয় অন্যান্যরা সম্রাট আকবর ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের (১৫৬৫ খ্রীঃ – ১৬৩০ খ্রীঃ) দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

আর যারা আছেন সৈয়দ হযরত মোঃ কামেল (কাবিল মিয়া খন্দকার) (রঃ) সৈয়দ হযরত ইফসুফ (রঃ) হযরত শেখ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা বোখারী (রঃ) ও হযরত মুন্না শাহ্ (রঃ), হযরত মালেক শাহ্ (রঃ) ও অনেকের মাজার রয়েছে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকায়।

একজন বিশিষ্ট লেখক, সৈয়দ ইব্রাহিম ইসলামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিখতেন, যদিও তিনি বিশেষভাবে ইসলামী রহস্যবাদ বা তাসাউফের প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন। তাঁর জ্ঞানের জন্য তিনি ডেনিশম্যান্ড (জ্ঞানী) খেতাব লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি দানিশমান্দ নামেই পরিচিতি লাভ করেন। সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায় তাঁর মাজারকে অধিকাংশ মানুষ হযরত শাহ্ মাজার নামেই চিনে।

সৈয়দ ইব্রাহিম দানিশমান্দ ফারসি ও আরবি ভাষার একজন বিশিষ্ট পণ্ডিতও ছিলেন। তিনি দিল্লির সম্রাট দ্বারা এই কৃতিত্বের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, যার কাছ থেকে তিনি মালিক-উল-উলামা (পণ্ডিতদের প্রিন্স) উপাধি পেয়েছিলেন, পাশাপাশি সম্মানিত কুতুব-উল-আশেকীন দ্বারাও পরিচিত ছিলেন । এক পর্যায়ে দানিশমান্দকে সোনারগাঁয়ে জমি শুল্ক মঞ্জুর করেছিলেন বাংলার সুলতান ফতেহ শাহ্, পরে সেখানে তার পূর্ববর্তী জমিদারি থেকে সিলেটের তারফের মধ্যে স্থানান্তরিত করে। এখানে তিনি একটি খানকাহ বা সুফি মিলন-ঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখান থেকে তিনি ইসলাম প্রচার করেছিলেন পাশাপাশি কাদিরিয়া সুফিবাদও করেছিলেন। এই অনুশীলন তাঁর বংশধরদের পাশাপাশি তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরসূরীরাও অব্যাহত রেখেছিলেন।

সৈয়দ হযরত ইব্রাহিম দানিশমান্দকে পঞ্চদশ শতাব্দীর ফাতেহ শাহ মসজিদের নিকটে সোনারগাঁয়ের সাহেববাড়ি এলাকার সমাধি কমপ্লেক্সে সমাধিস্থ করা হয়, একটি তিনি পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং অন্যান্য ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন। এটিকে একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং প্রতিবছরের ২৫ জানুয়ারি পবিত্র ওরশের মাধ্যমে ভক্তবৃন্দ দর্শন করেন।

এছাড়াও প্রতিদিনই সৈয়দ হযরত ইব্রাহিম দানিশমান্দের মাজারে দেশবিদেশ থেকে অনেক ভক্ত ও পর্যটকরা বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাসের শিকড় সন্ধ্যানে আসেন।

সুত্র : তাওয়ারীখ-ই-ঢাকা ও অন্যান্য মাধ্যম।


আপনার মতামত জানান