সোনারগাঁয়ের সবজি রপ্তানী হচ্ছে আরব–ইউরোপে

প্রকাশিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ডেইলি সোনারগাঁ >>
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে শীতকালীন সবজির চাষ হচ্ছে। আর এসব সবজির একটি বড় অংশ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

আর সবজি চাষে যুক্ত হয়ে দুটি ইউনিয়নের ৪৬টি গ্রামের অনেক কৃষকের যেমন ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে তেমনি প্রায় ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

 

সরেজমিন গিয়ে সবজিচাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সোনারগাঁয়ের এই ৪৬ গ্রাম থেকে শীতকালে প্রতি মাসে গড়ে ২৫ লাখ টাকার সবজি রপ্তানি হয়। এর মধ্যে লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক ও পালংশাক সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়।

উপজেলার সনমান্দি ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে তাঁদের ফসলি জমিতে শাকসবজি ফলিয়েছেন। অনেকে আবার সড়কের দুই পাশে, এমনকি বাড়ির আঙিনায়ও লাউ, লালশাক, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ, মুলাসহ নানা ধরনের শীতকালীন শাকসবজি চাষ করেছেন।

সনমান্দি ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, এই এলাকায় অনেক বছর ধরে সবজি চাষ হয়। তবে তাঁরা ছয় বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ করছেন। আগে যেসব জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ করতেন, এখন সেসব জমিতে শাকসবজির চাষ করছেন। কারণ শাকসবজি উৎপাদনে লাভ বেশি। এলাকার কৃষকেরা এখন ন্যায্য দামও পাচ্ছেন।

কৃষকদের সঙ্গে শাকসবজি উৎপাদনের কাজে তাঁদের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী এবং গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকেরাও সহযোগিতা করছেন। স্থানীয় লোকজন বলেন, গ্রামগুলোতে আগে যেমন অভাব-অনটন ছিল, সেটা এখন নেই বললেই চলে।
কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তাঁদের উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য ঢাকা কিংবা কোনো হাট-বাজারে নিতে হয় না। আটজন রপ্তানিকারক সরাসরি জমি থেকেই পাইকারি দামে অধিকাংশ সবজি কিনে নেন। বাকি সবজি মহাজনেরা কিনে নেন এবং রপ্তানিকারক কিংবা বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ করেন। রপ্তানিকারকেরা সবজি প্যাকেটজাত করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপে রপ্তানি করেন তাঁরা।

সবজি রপ্তানি হওয়ায় অর্ধশতাধিক পরিবারের ভাগ্য খুলে গেছে। এমনই একজন নাজিরপুর গ্রামের রমজান মিয়া। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও আমার সংসারে অভাব-অনটন ছিল। সবজি চাষ করে এখন আমার পুরো পরিবার স্বাবলম্বী।’

একজন কৃষক একটি জমিতে একাধিকবার নানা ধরনের সবজির চাষ করেন। এখানকার যেসব গ্রামে সবজির উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেসব গ্রামে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে কীভাবে অধিক সবজি ফলানো যায়, সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ কৃষকেরাই জোগাড় করেন।

কৃষকেরা আরও জানান, এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ করে তাঁরা এক মৌসুমে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। সবজি চাষ শেষে বর্ষার আগে এসব জমিতে তাঁরা বর্ষা মৌসুমের ধান চাষ করেন।

কৃষকেরাও জানান, রপ্তানিকারকেরা কিছু কিছু কৃষককে অগ্রিম হিসেবে কিছু টাকা ধার দেন। এতে কোনো লাভ ধরা হয় না।

আপনার মতামত জানান