সেলাই শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
সুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ৩০টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। গ্রামীণ অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের এই আয়োজনটি চলছে এক বছর ধরে। বিনা মূল্যে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এই নারীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সেলাই মেশিন। অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী কিশোরী মেয়ে, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের খুঁজে বের করে তাঁদের বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের দক্ষ সেলাই কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পর বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন উপহার দেওয়া হয়। গত বছরে পাঁচ শতাধিক নারী ও কিশোরীকে সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে মেশিন দেওয়া হয়েছে। সেই মেশিনে সেলাইয়ের কাজ করে এরই মধ্যে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে অথবা নিজের পড়ার খরচ নিজেই জোগাচ্ছে অনেকে।
সম্প্রতি নাটোর সদর ও লালপুর উপজেলায় দুটি বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে। অসহায় অসচ্ছল শতাধিক নারী এই দুই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও সদরে দুটি এবং রানীশংকৈলে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু হয়েছে। এই তিনটি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শতাধিক নারী ও কিশোরী।
বর্তমানে চালু থাকা ৩০টি বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সহস্রাধিক অসচ্ছল নারী ও কিশোরী সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কোথাও কোথাও সেলাই মেশিন বিতরণের পর দেওয়া হচ্ছে ব্লক, বাটিকসহ হাতের কাজের নানা প্রশিক্ষণ। রংপুর সদরের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সেলাই, ব্লক ও বাটিকের কাজ শেখানোর মাধ্যমে গত বছরের শুরুতে প্রথম বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়। গত বছরের মার্চে ৩০ জন অসহায় অসচ্ছল নারী ও কিশোরীকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছিলেন কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। সেই থেকে শুরু।
এরপর প্রতি মাসেই বাড়তে থাকে সেলাই মেশিন বিতরণের সংখ্যা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা। ১৬টি জেলার ৩০টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন গ্রামীণ নারীরা। সপ্তাহে দুই বা তিন দিন করে তিন মাসের বিনা মূল্যের প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। প্রথমেই শিখছেন হাতে সেলাই ও মাপ নিয়ে কাপড় কাটার কাজ। এরপর মেশিনে সেলাই শিখে কতটুকু কাজ শিখেছেন, সেই পরীক্ষায় অংশ নেন। সফলভাবে কাজ শিখে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন উপহার পাচ্ছেন। প্রতিটি সেলাই মেশিন একেকজন
নারীর জন্য উপার্জনের হাতিয়ার হচ্ছে। নিজের পরিবারের জামাকাপড় ও বাইরের মানুষের কিছু কাজের অর্ডার নিয়ে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। আর যাঁরা এখনো কাজ শিখছেন, তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। তাঁদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
ইরিন ও শিমলা দুই বোন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দুজনই মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ছে। স্টেশন বাজারে সবজি বিক্রি করেন তাদের বাবা। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারটিকে একটু ভালো রাখতে দুই বোন সিদ্ধান্ত নেয় নিজের পায়ে দাঁড়াবে। শিখবে সেলাইয়ের কাজ। খুলবে একটি লেডিস টেইলার্স। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তারা ভর্তি হয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। মনোযোগসহকারে শিখছে সেলাইয়ের কাজ। তাদের দৃঢ়বিশ্বাস, স্বপ্ন এবার সত্যি হবেই।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, নাটোর রেলওয়ে স্টেশনকে কেন্দ্র করে পাশেই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বাস করে। বাঁচার তাগিদে তারা বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পেশা। এখানকার অসহায় নারী ও কিশোরীদের হাতের কাজ শেখার আগ্রহ দেখে বসুন্ধরা গ্রুপ বিনা মূল্যে তাদের সেলাইয়ের কাজ শেখাচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে এমন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রশংসনীয়। পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে বসুন্ধরা শুভসংঘের এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র। প্রত্যেকেই যদি দক্ষ হয় এবং বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পায়, তাহলে অবশ্যই তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
সদর, রংপুর; নান্দাইল, ময়মনসিংহ; সারিয়াকান্দি, বগুড়া; সাদুল্যাপুর, গাইবান্ধা; সদর, দিনাজপুর; বিরামপুর, দিনাজপুর; দুর্গাপুর, রাজশাহী; গোদাগাড়ী, রাজশাহী; সদর, কুষ্টিয়া; দৌলতপুর, কুষ্টিয়া; চর বিশ্বাস (গলাচিপা), পটুয়াখালী; গলাচিপা, পটুয়াখালী; সদর, মাদারীপুর; কালকিনি, মাদারীপুর; পেয়ারপুর (সদর), মাদারীপুর; রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী; ভাঙ্গুড়া, পাবনা; সুজানগর, পাবনা; চাটমোহর, পাবনা; পাঁচবিবি, জয়পুরহাট; ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট; হিলি, দিনাজপুর; বীরগঞ্জ, দিনাজপুর; কামারজানী (সদর), গাইবান্ধা; সদর, নাটোর; সদর, ঠাকুরগাঁও; লালপুর, নাটোর; বেগুনবাড়ী (সদর), ঠাকুরগাঁও; সদর, বগুড়া; রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও।
আপনার মতামত জানান