সৃষ্টির মাঝে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন সমরেশ মজুমদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। সোমবার (৮ মে) কলকাতার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে কলকাতায় একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। খবরটি নিশ্চিত করেছেন সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার। মৃত্যুকালে ‘অনিমেষ-মাধবীলতা’র স্রষ্টার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
১৯৪২ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম এই প্রখ্যাত সাহিত্যিকের। প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ায় তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এর পর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৭৫ সালে দেশ পত্রিকায় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর একের পর এক কালজয়ী সৃষ্টি লেখকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করে। তার সৃষ্টি উত্তরাধিকার, কালপুরুষ, কালবেলা-সহ একাধিক কালজয়ী উপন্যাস পাঠক মহলে চিরসবুজ হয়ে থাকবে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, গর্ভধারিণী, তীর্থযাত্রী, মোহিনী, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও অনেক জনপ্রিয় উপন্যাসের মাঝে তার অর্জুন সমগ্র, ইয়েতির আত্মীয় (১৯৯৯), একমুখী রুদ্রাক্ষ (২০০০), কার্ভালোর বাক্স (১৯৯৩), খিলজির গুহায় অর্জুন (২০১৬), ড্রাকুলার সন্ধানে অর্জুন (২০০০), দাসবংশ ধ্বংস (২০১১), দিনদুপুরেই রাতদুপুর (১৯৯৯), নবাবগঞ্জের নরখাদক (২০০৮), ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬), বরফে পায়ের ছাপ (২০১২), বিশল্যকরণী (২০১০), মানুষ পাচার (২০০৭), মুশকিল আসান (২০০৯), ম্যাকসাহেবের নাতনি (১৯৯৫), রক্তের আততায়ী (২০১৪), রত্নগর্ভা (১৯৯৪), লবণহ্রদ লণ্ডভণ্ড (১৯৯৮), লাখ টাকার পাথর (২০১৩), শুকনাঝাড়ে অর্জুন (২০১৪), হাঙরের পেটে হিরে (২০১৩), হিসেবে ভুল ছিল (১৯৯৭) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি শুধু তাঁর লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দলিত করে। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেররা তাঁর কলমে উঠে আসেন রক্ত-মাংস নিয়ে।
অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। সমরেশ কলকাতা ও বাংলাদেশএর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।
আপনার মতামত জানান