সিভিল সার্জনের গাড়ির সামনে বসে পড়লেন মুক্তিযোদ্ধারা

প্রকাশিত

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ডিও লেটারের সুপারিশের মাধ্যমে বদলি আদেশ পেয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেন সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল।

দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রতিবাদে সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলের গাড়ি আটকে মাটিতে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সুনামগঞ্জবাসী।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলের দায়িত্ব হস্তান্তরের খবর পেয়ে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে অবস্থান নেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সুনামগঞ্জবাসী।

দুপুর ২টার দিকে সুনামগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আশরাফুল আলমের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন সিভিল সার্জন তউহীদ আহমদ কল্লোল। দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ সিভিল সার্জনের গাড়ির সামনে বসে পড়েন। সেই সঙ্গে দায়িত্ব না ছেড়ে সিভিল সার্জনকে তাদের ওপর দিয়ে গাড়ির চালাতে বলেন তারা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, মালেক হোসেন পীর, দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায়, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তারেক, মাছুম হেলাল ও সালেহীন চৌধুরী শুভ প্রমুখ।

মাটিতে বসে মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর বলেন, দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ও লুটেপুটে খাওয়ার জন্য এদেশ স্বাধীন করিনি আমরা। ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল যখন সুনামগঞ্জ হাসপাতালের দুর্নীতি বন্ধ করতে চেয়েছেন তখনই তাকে বদলি করে দেয়া হয়েছে। এতে দুর্নীতিবাজদের জয় হয়েছে। সব দুর্নীতিবাজ এক হয়ে এমন কাজ করেছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল বলেন, আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা। সরকারের আদেশেই দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি আমি। সরকার বিব্রত হয় এমন কাজ আমি করতে পারি না। আমি যেখানেই যাব ভালো কাজ করব।

এর আগে সুনামগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বন্ধ, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলের বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানায় সচেতন সুনামগঞ্জবাসী। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

এ সময় বক্তারা সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলকে ২০ দিনের মাথায় বদলিকে- দুর্নীতির জয় বলে আখ্যায়িত করেন। তারা অনতিবিলম্বে বদলি আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহাল রাখার দাবি জানান।

এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ডিও লেটারের সুপারিশের মাধ্যমেই সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলকে বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমপি পীর ফজলুর রহমান লিখেছেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ডিও লেটারকে সম্মান জানিয়ে ২০ দিনের মাথায় সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলকে বদলি করে; তার স্থলে জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. শামছুউদ্দিনকে সুনামগঞ্জে পদায়ন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।’

এমপি পীর ফজলুর রহমান আরও লিখেছেন, ‘মাত্র ২০ দিন আগে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগ দেন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল। যোগদানের পর হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি ঘোষণা দেন হারাম এক টাকাও খাবেন না। এরই মধ্যে হঠাৎ করে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে মৌলভীবাজারে বদলি করা হয়। তার স্থলে জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. শামছুউদ্দিনকে সুনামগঞ্জে পদায়ন করা হয়। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন শামছুউদ্দিন। পরে অন্য জেলায় সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ পান। জগন্নাথপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা থাকার সুবাদে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে পদায়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর সুপারিশকৃত ডিও লেটার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেন শামছুউদ্দিন। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোলকে পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সুনামগঞ্জে যোগ দিয়েই অল্পদিনের মধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করেন ডা. কল্লোল।’

আপনার মতামত জানান