শেখ পরিবার, কে কোথায় আছেন?

প্রকাশিত

অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আওয়ামী লীগ সরকারের মসনদ। ৩৬ দিন স্থায়ী গণআন্দোলনের শেষ মুহূর্তগুলো ছিল নাটকীয় আর ঘটনাবহুল। হাসিনার পতনের পর শুধু আওয়ামী লীগ সরকার নয়, হারিয়ে গেছে শেখ পরিবার। ৫ আগস্ট দুপুরের পর সরকার পতনের ঘোষণা আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল সর্বত্র।পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৪৫ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই তাকে তৈরি হয়ে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর পর্যন্ত যেতে হয়। শেখ হাসিনাকে নিয়ে সামরিক বিমান যখন যাত্রা করে তখন সেখান থেকে কয়েক শ গজ দূরে আগারগাঁওয়ে লাখো মানুষের স্রোত। কিছু সময়ের মধ্যেই গণভবন, সংসদ ভবন এলাকা দখলে নেয় আন্দোলনে বিজয়ী জনতা।

জানা গেছে, শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্যও ৫ আগস্টের আগেই দেশ ছাড়েন। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই এখন আর দেশে নেই। ৫ আগস্টের আগে-পরে তারা দেশ ছেড়ে যান।

একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট দুপুরে তড়িঘড়ি পদত্যাগ করে সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
ওই দিন তারা দুজনই গণভবনে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের আর কোনো সদস্য তখন দেশে ছিলেন না। থাকলে তারা ওই বিমানেই দেশ ছাড়তেন।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। দিল্লিতে যাওয়ার পর তার মা এবং খালার সঙ্গে সায়মার সাক্ষাৎ হয়। লন্ডনে বসবাস করা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রী। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সরকার পতনের দুই দিন আগে সিঙ্গাপুর চলে যান। ৩ জুলাই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন। শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওই ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

শেখ ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে- এ নিয়ে সংগঠনের কারো কাছে তথ্য নেই। যুবলীগের একজন নেতা শনিবার একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফজলে শামস পরশও দেশে নেই। আন্দোলন চলাকালে কোনো একসময় তিনি বিদেশে গেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশে নাকি বিদেশে এ নিয়ে ধূম্রজাল রয়েছে। সূত্রের দাবি, তিনি দেশ ছেড়ে যেতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলন শুরুর সময়ই তিনি ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে যান। আজমীর শরীফ ভ্রমণে যাবেন এমনটা বলে তিনি দেশ ছাড়েন। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে আছেন।

বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছাড়েন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তিনি দেশ ছাড়লেও তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে। তিনি দেশে নাকি বিদেশে চলে গেছেন তা স্পষ্ট নয়।

আপনার মতামত জানান