শালবনে দাঁতরাঙার তোরণ

প্রকাশিত


বনের নাম রাংটিয়া। শাল বৃক্ষপ্রধান এই বনেরই অন্যতম শোভা দাঁতরাঙা ফুল। শেরপুরের ঝিনাইগাতীর স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় ‘ফুটকি’। কেবল ফুল নয়, ছোট ছোট গুচ্ছফল ধরে আছে গুল্মজাতীয় গাছগুলোতে। এই গাছের পাতা ও ফল মুখে নিয়ে চিবুলে দাঁত রঙিন হয়ে ওঠে। এই কার্যকারিতার জন্যই এমন নাম বলে জানা যায় স্থানীয়দের কাছ থেকে।


গত ২৯ জুলাই ছুটির দিনে আমরা; মানে কালের কণ্ঠ’র ঢাকা অফিসের ১১ কর্মী (পর্যটক দল) এবং স্থানীয় দুই প্রতিনিধিসহ (গাইড) আরো তিনজন রাংটিয়া বন ঘুরে এলাম। বনে ঢোকার আগে ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া গ্রাম থেকে হাঁটা শুরু করলাম আমরা। কিছুটা যাওয়ার পর দেখা মিলল ঘন বনের। এর মাঝে আগের পর্যটকদের ফেলে যাওয়া পথরেখা ধরে আমরা যখন হাঁটছি তখন সুউচ্চু শাল বৃক্ষরাজির নিচে নিজেদেরকে অতি ক্ষুদ্র জীব মনে হচ্ছিল। শাল গাছগুলোর উচ্চতা ২০-২৫ মিটার হয় বলে জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে। পর্যটকদের পায়ে পিষ্ট হয়ে ঘাসওঠা পথের দুই পাশে শোভা পাচ্ছিল দাতরাঙা ফুল; যেন আমাদের আগমন উপলক্ষে প্রকৃতি তোরণ বানিয়ে রেখেছে।

তখন দুপুর ১২টা। আমাদের ঘিরে থাকা শালবনের মাথার উপরে সূর্য গণগন করছে। আমরা বনের কোলে থাকায় সরাসরি তাপ লাগছে না, বরং শীতল পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল শরীরে। তাই সবাই হাঁটছি তো হাঁটছি। বনের শেষ দেখে ছাড়ব জাতীয় মনোভাব।

এক পর্যায়ে বনের মাঝে দেখা মিলল ঝিরিপথের। গাইডরা নেমে যাওয়ায় আমরাও তাঁদের পথ ধরি। পানির প্রবাহ বেশি না থাকলেও পায়ের গোড়ালি ডুবে যায়। শরীরজুড়ে যেন আরো শীতলতা। আঁকাবাঁকা ঝিরিপথ ধরে এগুতে থাকলাম আমরা। কিন্তু শেষ নেই এই পথের। মাঝে গিয়ে দেখা মিলল খাড়া উচু টিলার। শুকিয়ে যাওয়া ঝর্ণার মতো দাগ পড়ে আছে খাড়া অংশজুড়ে। তবে গাইডরা জানালেন এটি ঝর্ণা নয়, স্থানীভাবে ‘ঝুরা’ বলা হয়। বৃষ্টি থাকলে ঝর্ণার আদল পায়, না থাকলে কোদালকাটা টিলার মতো।

একে একে সবাই এসে থামলাম শালবনের ভেতর বিস্ময়জাগানীয়া সেই ঝুরার কাছে। ডিজিটাল ডিভাইসে সেই ক্ষণ স্মৃতিবদ্ধ করে আবার সামনে এগুতে শুরু করলাম সবাই। ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভারত সীমান্তের কাছে পৌঁছে গেলাম, যেখানে ঝিরির দুই অংশ দুইদিকে চলে গেছে। একাংশ ভারতে, অন্য অংশ রাংটিয়া বনের আরেকদিক দিয়ে আবার মিশেছে আমাদের যাত্রা শুরুর অংশে। গাইডের নির্দেশনায় অন্য অংশ ধরে আমরা ফিরে এলাম আগের জায়গায়।

কিছুটা জিরিয়ে আবার সেই ঘাসওঠা পথ ধরে গ্রামে ফেরার পালা। আবার সেই দাঁতরাঙা ফুলের তোরণ। ক্লান্তি ভুলিয়ে দেওয়া বেগুনি রঙের ঝালর।

দৈনিক কালের কন্ঠ’র
মফস্বল সম্পাদক
সাদেক আহমেদ সজল ভাইয়ের ফেসবুক থেকে

আপনার মতামত জানান