শম্ভু-আইনজীবী সফল বৈঠক , মিন্নির জামিন নামঞ্জুর

প্রকাশিত

বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার প্রধান সাক্ষী ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে আসামি করা, রিমান্ড শুনানিতে মিন্নির পক্ষে আইনজীবীদের দাঁড়াতে অপারগতা প্রকাশ, তড়িঘড়ি করে তাঁর স্বীকারোক্তি আদায় এবং সর্বশেষ মিন্নির জামিন শুনানির আগের দিন রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে তাঁর আইনজীবীর গোপন বৈঠক—এসব ঘটনায় সমালোচনা হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নও উঠেছে। আর এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন শম্ভু। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার পর মামলা দায়েরের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া এবং এর পরের ঘটনার পেছনে কলকাঠি তিনিই নাড়ছেন। তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথ প্রকাশ্যে খুনের মামলাটি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে মিন্নির পরিবার অভিযোগ করেছে।

এদিকে গতকাল রবিবার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। শুনানি শেষে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজী তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। একই আদালত শুক্রবার মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

এমপির সঙ্গে মিন্নির আইনজীবীর বৈঠক : সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করে আসছেন। মিন্নির জবানবন্দি দেওয়ার দিন আদালত চত্বরে চিৎকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘সবই শম্ভু বাবুর খেলা। তাঁর মাদক সম্রাট ছেলে সুনাম দেবনাথকে বাঁচাতেই আমার মেয়েকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

গত শনিবার মোজাম্মেল হোসেন কারাগারে মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে দাবি করেন, রিমান্ডে তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করে আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ যা শিখিয়ে দিয়েছে তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন মিন্নি। না হলে তাঁকে আরো ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল পুলিশ। মোজাম্মেল হোসেন মেয়ের জামিনের জন্য বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলামকে নিয়োগ করেন। শনিবার ঢাকা থেকে যাওয়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল আসলামের সঙ্গে কথাও বলে। কিন্তু ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর রোডে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যক্তিগত ল চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে শম্ভুর সঙ্গে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামের বৈঠক হয়। তাঁর সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুও ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে সংসদ সদস্য শম্ভুর ল চেম্বারে প্রবেশ করেন। এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আক্তারুজ্জামান বাহাদুরও সেখানে ছিলেন। তাঁরা কক্ষে প্রবেশের পর ভেতর থেকে সুনাম দরজা আটকে দেন। এ সময় কক্ষের বাইরে নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফও অপেক্ষমাণ ছিলেন। রাত ৯টা ৫৩ মিনিটের দিকে সুনাম দেবনাথ কক্ষ থেকে বের হয়ে দুলাল শরীফের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন। এরপর দুলাল শরীফ চেম্বার থেকে দ্রুত বের হয়ে যান। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম, সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু ও এপিপি আক্তারুজ্জামান বাহাদুর সংসদ সদস্যের চেম্বার ত্যাগ করেন। তাঁরা ৩০ মিনিটের মতো সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করেন।

মাহাবুবুল বারী আসলামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি শম্ভু একজন সিনিয়র আইনজীবী। তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। তবে রিফাত হত্যা মামলা নিয়ে কোনো কথা হয়নি।’ সংসদ সদস্য কি তাঁদের ডেকেছিলেন, নাকি তাঁরা ইচ্ছা করেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেছেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসলাম বলেন, ‘এমপি বারের সভাপতিকে ফোন দিয়েছিলেন, তিনি আমাকে জানানোর পর আমি সভাপতির সঙ্গে গিয়েছিলাম।’

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করার পর তাঁর সঙ্গেই আইনজীবীর এ বৈঠক হলো। এর সমালোচনা করে মোজাম্মেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাতের সেই বৈঠকের পরেই বুঝেছিলাম, ন্যায়বিচার আমার মেয়ের কপালে নেই। যদি থাকত তাহলে আসামি শনাক্তের কথা বলে আমার মেয়েকে মামলায় জড়ানো হতো না। রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হতো না।’

এ ব্যাপারে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার রাতে আইনজীবীরা চা খেতে আমার ল’ চেম্বারে এসেছিলেন।’

মিন্নির মা-বাবাকে গ্রেপ্তার দাবি : মিন্নির মা-বাবার গ্রেপ্তার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহত রিফাত শরীফের পরিবার। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে বরগুনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এর আগে একই দাবিতে প্রেস ক্লাবের সমানে ‘বরগুনা সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের একাংশের কর্মীরা অংশ নেয়। তবে রিফাত শরীফের পরিবারের বাইরে অন্য কেউ বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ‘দিনদুপুরে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। প্রাথমিকভাবে যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সেখানে মিন্নির ভূমিকায় সবাই প্রশংসা করে। তাই আমি প্রাথমিকভাবে মিন্নিকে মামলার প্রধান সাক্ষী করি। পরে এ ঘটনার আরো ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ায় মিন্নির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নয়ন বন্ডের মায়ের কথায় আরো প্রকাশ্যে আসে মিন্নির আসল চেহারা। এরপর আমি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাই। পুলিশও তাদের তদন্তে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে। এর পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ছেলে হারিয়েছি, আমার পাশে না দাঁড়িয়ে কিছু কিছু গণমাধ্যম খুনিদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’

দুলাল শরীফ দাবি করেন, ‘বিয়ের (নয়ন বন্ডের সঙ্গে কথিত বিয়ে) বিষয়টি গোপন করে মিন্নির মা-বাবা রিফাতের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এই বিয়েই আমার ছেলের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মিন্নির মা-বাবাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

পেছনের ঘটনা : চলতি বছরের ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। সে ভিডিওতে দেখা যায়, স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নি প্রাণপণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ওই দিন রাতে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সেখানে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মিন্নিকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করেন। তিনি লিখেছিলেন, এখন যাকে মিডিয়া হিরো বানাচ্ছে, সে-ই এ ঘটনার ভিলেন হতে পারে।

এরপর গত ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। ওই দিন সকালেই সংসদ সদস্য শম্ভু নিহত রিফাত শরীফের বাড়িতে যান। তিনি রিফাতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সে ঘটনার একটি ভিডিও কালের কণ্ঠ’র হাতে রয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রিফাতের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শম্ভু বলছেন, ‘দুটি আইন পাসের জন্য সংসদে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। সে কারণেই আমি ঘটনার সময় আসতে পারিনি। তবে ঘটনার পর থেকেই রিফাতের বাবার সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। মামলা করতে দেরি হচ্ছে কেন? দ্রুত মামলা করার জন্য আমি তাকে বারবার বলেছি। সে যথাযথভাবে মামলাটি করেছে। মামলায় যদিও সে (রিফাতের বাবা) একটা নির্দিষ্টসংখ্যক আসামি দিয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, আরো অনেক লোক এর সঙ্গে জড়িত। এর পেছনে একটা গ্রুপ আছে।’ এ সময় রিফাতে বাবাকে এমপির ডান পাশে দাঁড়ানো দেখা যায়।

মামলার এজাহারে ঘটনার শুরুর সময় উল্লেখ করা হয়েছে সকাল ১০টা ১০ মিনিট, যখন রিফাতকে কলেজ ফটক থেকে ধরে আনা হয়। রিফাতকে কোপানোর ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করেন মঞ্জুরুল আলম জন। তিনি মামলার ৩ নম্বর সাক্ষী ও রিফাতের বন্ধু। এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের ঘনিষ্ঠ মঞ্জুরুল আলম মামলার এজাহার তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশকে সহায়তা করেছেন। রিফাতের ওপর হামলার ঘটনার পর তিনি মিন্নির বিপক্ষে অবস্থান নেন। মিন্নি শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর তাঁর অনুসারীরা তাঁকে বাধা দেয় এবং রিফাতের লাশও দেখতে দেয়নি।

উল্লেখ্য, এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে এক বছর আগেই জেলা ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও মাদক চোরাকারবারে জড়িত নয়ন বন্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল।

নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর বরগুনার বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। তারা বলছিল, নয়ন বন্ড নিহত হওয়ায় তার আশ্রয়দাতারা আড়াল হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। বেশ কিছুদিন পর পুলিশের হাত ঘুরে গণমাধ্যমে নতুন আরেকটি ভিডিও ফুটেজ আসে। গণমাধ্যমে সেটা প্রকাশের পর নয়নের মা শাহিদা বেগম প্রকাশ্যে আসেন। তিনি নতুন ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে মিন্নিকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মিন্নির শ্বশুর তাঁর ছেলের হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। গত ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেন। পরদিন একই দাবিতে ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। সেই মানববন্ধনে এমপি শম্ভু সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। এমনকি মানববন্ধনে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন। এরপর ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। যদিও একই দিন শ্বশুরের অভিযোগের জবাবে দিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মিন্নি। তিনি বলেন, তাঁর শ্বশুর প্রভাবশালীদের চাপে ও প্ররোচনায় তাঁকে জড়িয়ে বানোয়াট ও মিথ্যা বলছেন।

এরপর গত ১৬ জুলাই আসামি শনাক্তের কথা বলে মিন্নিকে তাঁর বাবার বাসা থেকে পুলিশ লাইনসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাঁকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মিন্নির বাবা দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়। এর পেছনে প্রভাবশালী কারো প্ররোচনা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন একজন সংসদ সদস্য। এর আগে আওয়ামী লীগের বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশেও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালতে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আইনজীবী না থাকায় সেদিন মিন্নিকেই কথা বলার সুযোগ দেন বিচারক। মিন্নি তখন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। হত্যাকাণ্ডে আমি জড়িত নই। এ মামলায় আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।’

আইনজীবী না দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে মিন্নির পরিবারের দাবি, রিফাত খুনের পর এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ তাঁর ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন, আইনজীবীরা কেউ আসামির পক্ষে দাঁড়াবেন না। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে শুক্রবার বিকেলে মিন্নিকে গোপনে জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বিচারক যখন তাঁর খাসকামরায় মিন্নির জবানবন্দি গ্রহণ করছিলেন তখন মিন্নির বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে বলছিলেন, জোরজবরদস্তি ও নির্যাতন করে তাঁর মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমার মেয়ে জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। এটাই কি তার অপরাধ? এ সব কিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথকে সেভ করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেওয়া হচ্ছে।’

মিন্নির জামিন হয়নি : গতকাল জেলহাজতে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আবেদন নামঞ্জুর করেন। শুনানির সময় কারাগারে থাকা মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়নি।

আদালতে মিন্নির পক্ষে জামিনের আবেদনটি করেন বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী আসলাম। তাঁর সঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দুজন এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাতজনসহ মোট ১৩ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। তাঁরা মিন্নির শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জামিন প্রার্থনা করেন।

শুনানি শেষে আইনজীবী আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে রিফাত হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মিন্নি জড়িত থাকার কথা বলেছে। এ কারণে বিচারক তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। পরবর্তী সময়ে বরগুনা জজ আদালতে মিন্নির পক্ষে জামিনের আবেদন করা হবে বলে জানান আসলাম।

তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল বলেন, ‘রাতের বৈঠকের পরই আমি ধরে নিয়েছি ন্যায়বিচার পাব না।’

আপনার মতামত জানান