রহস্যময় সৌন্দর্যে ঘেরা সোনারগাঁয়ের পোদ্দার বাড়ি

প্রকাশিত

ডেইলি সোনারগাঁ >>
ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিনের সাক্ষী হিসেবে লোনা ইট, কালো পাথরের টেরাকোটা ধূসর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পোদ্দার বাড়ি হতে পারে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। দোতলা এ বাড়ির স্থাপত্যে ঔপনিবেশিকতা ছাড়াও মোঘল, গ্রিক এবং গান্ধারা স্থাপত্যশৈলীর সাথে স্থানীয় কারিগরদের শিল্পকুশলতার অপূর্ব সংমিশ্রন দেখা যায়।

বাড়িটি ব্যবহারোপযোগিতা, কারুকাজ, রঙের ব্যবহার, এবং নির্মাণকৌশলের দিক দিয়ে উদ্ভাবনী কুশলতার এক অপূর্ব মিশেল। ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই-লোহার তৈরি ব্র্যাকেট, ভেন্টিলেটর আর জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ। বাড়িটির খিলান ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে নীল ও সাদা ছাপ দেখা যায়। এছাড়া বাড়িটিতে নকশা ও কাস্ট আয়রনের কাজ নিখুঁত। কাস্ট আয়রনের এই কাজগুলো ইউরোপের কাজের সমতূল্য বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর সাথে আছে সিরামিক টাইল্সের রূপায়ণ।

অন্দরবাটি এবং বহির্বাটি -এই দুই ভাগে বিভক্ত। অন্দর মহলের রমনীদের জন্য রয়েছে তিন দিকে তিনটি শান বাঁধানো ঘাটসমৃদ্ধ একটি পুকুর। বাড়ির চারদিকের ঘেরাটোপের ভিতর আছে উন্মুক্ত উঠান। পানি সরবাহের জন্য দুপাশে ২টি খাল ও ২টি পুকুর আছে। সুপেয় পানির জন্য আছে গভীর কুপ। দোতলা লাল দালানটি বঠৈক খানা বলে জানা যায়। ১১০ কক্ষ বিশিষ্ট এ পোদ্দার বাড়িতে আছে, মন্দির, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বৈঠকখানা, আতুর ঘর। প্রধান ফটকের বাহিরে দক্ষিন দিকের শান বাঁধানো পুকুর ঘেসে মোগল আদলের নঁকশা সমৃদ্ধ ফটকের ভিতরে বিশাল ফুলের বাগান, আছে খেলার মাঠ। শত-শত বছরের অযত্ন-অবহেলার চিহ্ন গাঁয়ে মেখে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে প্রসাদপ্রম পোদ্দার বাড়ি। এ বাড়িটির পাশ দিয়েও বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল।

বিশেষজ্ঞদের মতে ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের প্রাচীন জনপদ পানাম নগরীর জমিদাররা নিজেদের দালানের নঁকশা ও চাহিদা অনুযায়ী নিজেরাই ইট তৈরি করতেন । গোল, লম্বা, তিন কোনা মোদ্দা কথা চাহিদা অনুযায়ী। পোড়ানো হতো লাল টুকটুকে করে। সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি পুরো, লম্বা চাহিদা মতো। একটি ইটের গল্প অনেক পুরানো । সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইটের ভাঁজে ভাঁজে সযতেœ গাঁথা আছে ইতিহাস। এইরকম অসংখ্য ইট, ঘামে ভেঁজা পেশী বহুল শ্রমিকের শিল্পী মনের নিঁখুত আয়োজনে তৈরি দালান আজ বহু বছর পূর্বের আভিজাত্যের ইতিহাস । পোদ্দার বাড়ি সেইরকম একটি ইতিহাস গড়া দালান। বাড়িটির অবস্থান ঐতিহাসিক পানাম নগরীর কাছে। বর্তমানে সোনারগাঁও পৌরসভা কার্যালয়ের পূর্ব ও উত্তর পাশ ঘিরে রেখেছে পুরনো এ বাড়িটি। অযত্ন অবহেলায় বাড়িটির অনেক স্থাপনা ভেঙ্গে গেছে। এখনো প্রতিদিন একটু একটু ধ্বংস হচ্ছে এ বাড়িটি।

আনুমানিক ১২০০- ১৩০০ বঙ্গাব্দে পোদ্দার বাড়িটি তৈরি স্থানীয় অনেকের ধারনা। কেউ কেউ আবার ৭০০ বছরের পুরনো বলেও জানান। তবে বয়স্করা রামমোহন পোদ্দার, শশী পোদ্দার, আনন্দ পোদ্দার, গোপী পোদ্দারকে দেখেছেন বলে জানান। আনন্দ পোদ্দারের নিজস্ব জায়গায় তারই নামেই আনন্দ বাজার হাটটি মিলিয়েছেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা যায়। ৩৭২ বিঘা জমি মালিক পোদ্দারদের পুরো সম্পত্তিই এডভোকেট আউয়াল এর দখলে । তার বাবা আনোয়ার হোসেন পোদ্দারদের কাজ করতেন। সেই সুত্রে পোদ্দারদের সাথে সম্পর্ক। তিনি বাড়িটি কিনেছেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনূর ইসলাম বলেন, ইতিহাস সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করে দিলে, নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক রাখী রায় জানান, পোদ্দার বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিধায় এখনো দখল পাচ্ছি না। তবে আমরা অচিরেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু এবং পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত করতে পারবো বলে আশা করি।।

আপনার মতামত জানান