যে পাঁচ ফুটবলারের মাঠে খেলা চলাকালীন মৃত্যু হয়েছে….
ডেনমার্কের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনকে নিয়ে পুরো ফুটবলবিশ্ব রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছে। এরিকসেন তখন মাঠের মধ্যে কার্যত নিথর হয়েই পড়েছিলেন। সেইসময় চোখে জল আসেনি এমন ফুটবল সমর্থক পুরো বিশ্বে বোধহয় খুব কমই আছেন। পুরো দল মুহূর্তের মধ্যে তাকে ঘিরে ধরেন। মাঠে উসেইন বোল্টের গতিতে দৌড়ে আসেন দলের চিকিৎসকেরা। এরিকসেনের মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
সঙ্গে সঙ্গে পার্কেন স্টেডিয়াম থেকে তাকে রিগসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো রাস্তায় গ্রিন করিডোর ধরে দৌড়ে যায় অ্যাম্বুলেন্স। কিছুক্ষণের মধ্যেই চিকিৎসকেরা জানান যে এরিকসেনের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি বেঁচে আছেন। এরপরই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পুরো বিশ্ব। তবে মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া সব ফুটবলারের ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন নয়। তেমনি কয়েকজন ফুটবলার সম্পর্কে জানা যাক:
শেয়িক তিওতে : আইভরি কোস্টের ফুটবলার ছিলেন তিওতে। তিনি নিউকাসেল ইউনাইটেডের মতো ক্লাবের হয়ে অসাধারণ একটা কেরিয়ার গড়েছিলেন। কিন্তু, ২০১৭ সালে এক সোমবারের সকালে অনুশীলন চলাকালীন তিনি হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ফিল ও’ডোনেল : মাদারওয়েল দলের অধিনায়ক ছিলেন ফিল ও’ডোনেল অধিনায়ক। ডুন্ডির বিপক্ষে একটা ম্যাচ চলাকালীন ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং মারা যান। ৩৫ বছর বয়সি এই মিডফিল্ডারের কেরিয়ার গ্রাফটা অসাধারণ ছিল। তিনি স্কটল্যান্ড, সেলটিক এবং শেফিল্ড ওয়েডনেসডে’র হয়ে খেলেছেন। পরিবর্ত খেলোয়াড় মাঠে নামানোর আগেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আন্তোনিও পুয়ের্তা : সেভিলা এবং স্পেনের উইং ব্যাক আন্তোনিও পুয়ের্তা মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রাণ হারিয়েছিলেন। গেতাফের বিপক্ষে একটা ম্যাচ চলাকালীন তিনি আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। স্যানচেজ পিজুয়ানে আয়োজিত এই ম্যাচের মাত্র ৩৫ মিনিটের মাথায় তিনি নিজের গোলের দিকেই জগিং করতে করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময়েই ঘটে যায় এই বিপদ। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরের একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যায়। আর তারপরেই মৃত্যু হয়েছে।
মার্ক ভিভিয়ান ফো : ক্যামেরুনের ফুটবলার ছিলেন মার্ক ভিভিয়ান ফো। তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড দলের হয়ে খেলতেন। ২০০৩ সালের জুন মাসে ফ্রান্সে কলম্বিয়ার বিপক্ষে একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে তিনি নেমেছিলেন। ম্যাচের ৭২ মিনিটে সেন্টার সার্কেলে লুটিয়ে পড়েন ফো। তাকে স্ট্রেচারে শুইয়ে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার হৃদযন্ত্র বেশ কয়েকবার পাম্প করা হলেও কোনও সাড়া দেননা তিনি ।
নিয়ে যাওয়া হয় স্টেডিয়ামের মেডিকেল সেন্টারে। তখনও তিনি বেঁচে ছিলেন। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই ফো মারা গিয়েছিলেন। চিকিৎসা পরিভাষায় এটাকে হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি বলা হয়। জানা গেছে, এই রোগে শারীরিক অনুশীলন করার সময়েই মৃত্যুর ঝুঁকি সবথেকে বেশি থাকে।
ক্রিশ্চিয়ানো জুনিয়র : জুনিয়রের মৃত্যুটা আজও ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের হৃদয়ে দগদগে ক্ষতের মতো লেগে রয়েছে। ২০০৩ সালে ভারতে এসেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো সেবাশ্চিয়ানো ডি লিমা জুনিয়র। ন্যাশনাল ফুটবল লিগে তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে সই করেছিলেন।ইস্টবেঙ্গলে দুর্দান্ত একটা মরশুম কাটানোর পর তিনি গোয়ার ক্লাব ডেম্পোয় যোগ দেন।
২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে মোহনবাগানের বিপক্ষে একটা ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তিনি। ডেম্পোর দ্বিতীয় গোলের খোঁজে তিনি বক্সের মধ্যে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক সেইসময় সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের গোলরক্ষক সুব্রত পালের সঙ্গে তার ধাক্কাধাক্কি হয়। মাঠে কিংবা কোনও চিকিৎসক ছিলেন না যিনি জুনিয়রকে সাহায্য করতে পারতেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই জুনিয়র আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যায়।
সূত্রঃ কালেরকন্ঠ।
আপনার মতামত জানান