যারা অপরাধীদের শাস্তি দেয় তারাই অপরাধী হয়ে যায়
বুধবার (১২ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজার সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম, তখন বেশ কিছু বড় বড় জায়গায় একজন অফিসার হাত দিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো, যেটা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমি বলে দিয়েছি, তাদের আগের জায়গায় বহাল রাখতে।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি দমনই বলেন আর খাদ্য নিরাপত্তাই, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এখানে এমন অনেক বড় বড় জায়গা আছে, যেখানে হাত দিলেই মনে হয় হাতটা পুড়ে যাচ্ছে এবং যারা এই কাজটা করতে যায় তারাই অপরাধী হয়ে যায়। আর কিছু কিছু পত্রপত্রিকাতো আছেই যে এদের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করে।
তিনি বলেন, সেখানেও আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা দরকার যে, সঠিক কাজটা করেছে কি-না, সেটা দেখে বিচার করা। কোন পত্রিকায় কী লিখলো সেটা দেখা নয়।
বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতিবাজদের প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন অনেক বড় বড় জায়গা আছে, যেখানে হাত দিলেই মনে হয় হাতটা পুড়ে যাচ্ছে এবং যারা এই কাজটা করতে যায় তারাই অপরাধী হয়ে যায়।
গত রোজার শেষ দিকে (৩ জুন বিকেলে) অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অপরাধে আড়ংয়ের উত্তরা শাখাকে জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তারও আগে কসমেটিক্স ও প্রসাধন সামগ্রী বিক্রির দোকান বিডি বাজেট বিউটি শপ এবং বিউটিশিয়ান কানিজ আলমাস মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পারসোনাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে জরিমানা করেন তিনি। তবে আড়ংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানের পর সেদিন রাতেই মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু পরদিন দুপুরেই মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলির আদেশ বাতিল করে তাকে স্বপদে বহাল রাখার নির্দেশ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত বড় জায়গা হোক, খারাপ কিছু থাকবে না, অনিয়ম হবে না। সাধারণ ছোট-খাট সেগুলো ধরতে পারবে, বড় অর্থশালী সম্পদশালী হলে তাদের হাত দেওয়া যাবে না, তাদের অপরাধ অপরাধ না, এটাতো হয় না। যে অপরাধী সে অপরাধী, আমার চোখে অপরাধী অপরাধীই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব) রফিকুল ইসলাম এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নানের আলাদা দু’টি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে দেন প্রধানমন্ত্রী।
রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নে ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের অনেকেই দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জনশ্রুতি আছে’- এই লাইনটি বাতিল করতে রফিকুল ইসলামের প্রস্তাবের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নে তিনি জনশ্রুতি আছে এ কথাটা বলেছেন। এ কথাটা বাতিল করার প্রয়োজন নেই। কারণ কথাটা একেবারেইতো মিথ্যা নয়। আর সবাইতো একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা নন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না যে, সবাই একেবারে একশ’ ভাগ সৎ। সেক্ষেত্রে উনি বলেছেন এই সংস্থার মধ্যে অনেকেই দুর্নীতিবাজ বলে জনশ্রুতি আছে। আমি মনে করি, সংস্থাকে এখন থেকে সচেতন হতে হবে, বা যারা কাজ করবে তাদের ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে, যেন এমন কিছু না করেন যাতে এই ধরনের জনশ্রুতি সৃষ্টি হয়।
এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চেষ্টা করি, কিভাবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা যায়। আমি নিজেকে দেশের মানুষের সেবক হিসেবে মনে করি। প্রধানমন্ত্রী একটা দায়িত্ব, এই দায়িত্ব যথাযথ পালনের চেষ্টা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায়, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়, তখন বিভিন্ন স্তরে কিছু টাউট-বাটপার শ্রেণির মানুষ তৈরি হয়। এদের শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে দমন করা সম্ভব হয় না। এদের সামাজিকভাবে দমন করতে হবে। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরে যারা প্রতিনিধি আছেন, তাদের আমি বলবো- সবাই মিলে এলাকায় এলাকায় কমিটি করতে, যেন কেউ অপরাধের সুযোগ না পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় বলি, অপরাধী যেই হোক, আমার দলেরও যদি হয়, ছাড় দিচ্ছি না, পাবেও না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার শাসন ঘর থেকেই শুরু করতে হয়, আমিও তাই করছি। অন্যরা করলেও ছাড় পাবে না, আমাদের দলের কেউ অপরাধ করলে তারাও ছাড় পাবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকলেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
ঘুষ গ্রহণকারীর মতো প্রদানকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঘুষ যে নেবে সেও অপরাধী, যে দেবে সেও অপরাধী। সবার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। কেউ ছাড় পাবে না।
সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি, অপরাধ দমনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের যারা আছেন সবাই একসঙ্গে কাজ করেন। তবেই এই অপরাধ-দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবো।
আপনার মতামত জানান