মেঘনা নদী দখল করে মেঘনা গ্রুপের ৭ প্রতিষ্ঠান, উদ্ধারে নেই কোন তৎপরতা

প্রকাশিত




মেঘনা নদীর ২৪১ দশমিক ২৭ একর জমি দখল করে মেঘনা গ্রুপ ৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে বলে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে মেঘনা নদীর ৮৪ দশমিক ৭৭ একর জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান (ভবন) নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ দশমিক ৫ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর প্রভাব খাটিয়ে গ্রুপটি এসব জমি দখলে নিয়েছে। প্রতিবেদনের ৩ বছর অতিবাহিত হলেও উদ্ধারে কোন তৎপরতা। বিগত সরকার আমলে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা ড. আমহেদ কায়কাউসের প্রভাবে এসব দখলীকৃত জমি উদ্ধার করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এসব জমি উদ্ধার করতে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে নদী রক্ষায় ব্যর্থ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছে কমিশন। দেশের ৪০৬টি নদী দখল নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন গত ১৪ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক এক্ষুনি ব্যবস্থা নিতে না পারলে দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। মেঘনার ক্ষেত্রে এটি আরও কঠিন হবে। কারণ এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে মেঘনা নদী দখলকারী মদীনা গ্রুপের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মেঘনা গ্রুপের দখলকৃত নদীর জায়গা উদ্ধার করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেঘনা গ্রুপের দখলে থাকা নদীর জায়গা দখলমুক্ত করতে একাধিকবার অভিযান শুরু হলেও মাঝপথে তা আটকে গেছে। এরপর আর সেখানে অভিযান পরিচালিত হয়নি। এতে করে অন্য দখলদাররাও ছাড় পেয়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনটি আমরা এখনো পাইনি। তবে গত ২৮ জানুয়ারি জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা হয়েছে। মেঘনা গ্রুপের নদী দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মেঘনা শাখা নদী মারাখালী নদীর অংশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের পাড় থেকে নদীর ভেতরে প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত দখল করার অভিযোগ উঠেছে। মেঘনা নদীর অন্তত ৩০০ বিঘা জমি দখল করেছে মেঘনা গ্রুপ। দখলকৃত স্থানে ইতিমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে মেঘনা গ্রুপের মালিকানাধীন ফ্রেশ টি ফ্রেশ সুগার মিলস, পেপার মিলস, কেমিক্যাল ফ্যাক্টারিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, মেঘনা গ্রুপের এমন অবৈধ দখলে ভরাট হওয়ায় সাধারণ গতিপথ হারাতে বসেছে মেঘনা। অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে নদীসংলগ্ন বিভিন্ন নিচু আবাসিক এলাকা। বিশেষ করে আনন্দ বাজার এলাকায় মেঘনা নদীর প্রায় ৫০০ ফুট জায়গা দখল করে মাটি ভরাট করেছে মেঘনা গ্রুপ এবং প্রায় ৫০ একর জমি। পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা জৈনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০০ বিঘা জমি গ্রাস করেছে। আষাঢ়িয়ার চর ও ঝাউচর এলাকায় নদীর অধিকাংশ বালু ভরাট করেছে। নদীর প্রায় ৭০০ ফুট দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে মেঘনা গ্রুপ।

এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে মদীনা গ্রুপের দখলে থাকা নদী ও নদীর তীরবর্তী সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। মেঘনা গ্রুপের দখলে থাকাই নয় ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখলের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪০৬টি নদী দখলে আক্রান্ত। হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারের চিহ্নিত করা এসব নদীর একটি তালিকা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশ করা হয়। ওই বছর ১ জুলাই হাইকোর্টের এক রায়ে নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়।

আপনার মতামত জানান