মৃত্যুচিন্তা যেভাব বদলে দেয় মানুষের জীবন
প্রতিদিন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয় দিনের সূর্য। কিন্তু সময় সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে না। ভাগ্য, পরিবেশ, অন্যের অসহযোগিতার অজুহাতে পিছিয়ে যায় সে। কিন্তু মুমিন নতুন প্রত্যয়ে শুরু করে তার দিন। সে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয় এবং চেষ্টা করে গতকালের চেয়ে আজকের দিনটি যেন তার উত্তম হয়।
মানুষ সকালে তার দিন শুরু করে। দিন শেষে রাতে ঘরে ফেরে। ঘুমিয়ে বিশ্রাম নেয়। রাতের ঘুম ও দিনের কর্ম-তৎপরতাকে কোরআনে জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে যা করো তিনি তা জানেন। অতঃপর দিনে তোমাদের তিনি জীবিত করেন, যাতে নির্ধারিত সময় পূর্ণ করা হয়।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৬০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহই জীবগুলোর প্রাণ নিয়ে নেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের ঘুমের সময়। তারপর তিনি যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন তার প্রাণ রেখে দেন এবং অন্যদের প্রাণ ফিরিয়ে দেন, এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। (সুরা ঝুমার, আয়াত : ৪২)
কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা ঘুমকে ছোট মৃত্যু ও মৃত্যুর ভাই আখ্যায়িত করেছেন। কারণ মৃত্যুবরণ করলে যেমন মানুষ সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তেমনি ঘুমালেও দুনিয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না।
রাজা বখতে নাসর কর্তৃক জেরুজালেম শহর ধ্বংস হওয়ার পর উজায়ের (আ.) সে অঞ্চল অতিক্রম করছিলেন। তিনি দেখলেন জেরুজালেম শহর ও পার্শ্ববর্তী জনবসতিগুলো শশ্মানে পরিণত হয়েছে। তিনি চিন্তা করলেন আল্লাহ তাআলা এ শহরকে ধ্বংসের পর কিভাবে জনবসতি করবেন। আল্লাহ ঠিক তখনই উজায়ের (আ.)-কে মৃত্যু দান করেন। আল্লাহ তাআলা এক শ বছর পর তাঁকে জীবিত করেন এবং জানতে চান, তুমি এ অবস্থায় কতকাল ছিলে? উজায়ের (আ.) বললেন, এক দিন বা এক দিনের কিছু কম সময়। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৯, তাফসিরে ইবনে কাসির)
একইভাবে হাদিসে বর্ণিত ঘুমানোর আগের ও পরের দোয়ায় ‘ঘুমানো ও জাগ্রত হওয়া’কে জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর কিছু শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন, সেখানেও পরকালীন যাত্রার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। যেমন—পবিত্র দেহে, পবিত্র কাপড়ে, পবিত্র বিছানায় ঘুমানো। ঘুমের আগে গুনাহ মাফের দোয়া করা। আল্লাহর নামে ঘুমানো। ডান পাশে ফিরে কেবলামুখী হয়ে ঘুমানো। ইত্যাদি।
জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করার উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন দিন শেষে তার কৃতকর্মের হিসাব গ্রহণ করে। সারা দিনের ভালো-মন্দের হিসাব করে দেখে, আজ কত ভালো কাজ করতে পারলাম এবং কতটা পাপ আমার দ্বারা হলো। ঠিক যেভাবে মানুষ মৃত্যুর আগ মুহূর্তে নিজের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ও ভালো-মন্দের হিসাব করে। একইভাবে মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠে নতুন দিন শুরু করতে পারল, তখন যেন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার অঙ্গীকার করে। কেননা সে জানে আল্লাহর অনুগ্রহে সে জীবন ফিরে পেয়েছে। নতুন দিনটি শুরু করতে পেরেছে।
সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ।
আপনার মতামত জানান