মানসিক প্রতিবন্ধী ও তার শিশুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর মানবিক দৃষ্টান্ত
ডেইলি সোনারগাঁ :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মানসিক প্রতিবন্ধীর গর্ভে জন্ম নেওয়া পরিচয়হীন শিশুর চিকিৎসা-যত্ন এবং আশ্রয় দাতাদের খোঁজ খবর নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা। তারা প্রতিবন্ধী ও সদস্য ভূমিষ্ট হওয়া কন্যা শিশুর চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর আরো ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেছে। আর দিনমজুর আশ্রয়দাতা আমজাদ আলী পাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত ভ্যান। খুব শিগগিরই তার হাতে ভ্যানটি তুলে দেওয়া হবে।
জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন আনুমানিক ২২/২৩ বছরের পরিচয়হীন এক মানসিক প্রতিবন্ধী। কখনও ময়লা কাপড় চোপড় শরীরে জড়িয়ে আবার কখনও অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় থেকে মুখে বিড় বিড় করে কি যেন বলতেন। কেউ কিছু বললে কখনও তেড়ে আসতেন। আবার কখনও দেখা যায় ঠাণ্ডা মেজাজে। কিন্ত সপ্তাহ খানেক আগে ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। চোখ মেলে তাকাতে পারলেও তার ছিলনা কোনো নড়াচড়া। সেই সময়ে পথচারী ও গ্রামের লোকজন ভিড় শুরু হয়। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। কিন্ত অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারও না কারও সন্তান বা বোন। এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আমজাদ আলী তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করেই আবার তাকে নিয়ে এলাকায় যান। এরপর আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও অন্তঃসত্ত্বার কারণে সকলেই এড়িয়ে যান। কিন্ত এমন অবস্থায় অসুস্থ পাগলীকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারেননি দিনমজুর আমজাদ আলী। গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে সেবা যত্ন করতে থাকেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর দেখে প্রধানমন্ত্রী তাঁর একান্ত সচিবের মাধ্যমে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে অজ্ঞাত মানসিক প্রতিবন্ধী গর্ভবতী নারীর যত্ন নিতে নির্দেশ দেন। এরপর বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেলে কালীগঞ্জ হাসপাতালে এই প্রতিবন্ধী ফুটফুটে চেহারার কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে বেজায় খুশি আমজাদ-ছাকিরন দম্পতি। সে সময় জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা হাসপাতালে ছুটে যান। জেলা প্রশাসক সদ্য ভূমিষ্ট শিশু কন্যাকে কোলা তুলে নেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার আফসানা পারভিন জানান, ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে স্বাভাবিক না থাকায় ছোট্ট একটি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয়েছে। তবে মা ও নবজাতক এখনও সুস্থ আছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে অসহায় প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে কথা বলেছেন। যেকোনো প্রয়োজনেই তিনি তার পাশে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যে তাদের ২০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। আর আশ্রয়দাতাকে আয়বর্ধনমূলক কাজের জন্য একটি ভ্যান দেওয়া হবে। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাদের জানানো হবে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, প্রতিবন্ধী মায়ের পাশে যেদিন মজুর দাঁড়িয়েছেন তিনি অবশ্যই সহৃদয়তার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজে দিনমজুর হয়েও আমজাদ-ছাকিরন দম্পতি এ প্রতিবন্ধীকে পরিবারের একজন সদস্যের মতো করে সেবা করছেন এজন্য ওই পরিবার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি আরো বলেন, সদ্যজাত নবজাতকের চিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসার জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা সহযোগিতাও করেন। এ ছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা আফিস ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেছেন।
ঝিনাইদহ প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুটির সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তার আশ্রয় দাতা দিনমজুর আমজাদ আলীকেও সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে ব্যাটারিচালিত ভ্যানসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি।
আপনার মতামত জানান