মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান

প্রকাশিত



নিজস্ব প্রতিবেদক:
পেশাদারি মনোভাব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আনুগত্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ধরন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে প্রকাশ্যে – অপ্রকাশ্যে স্বীকার করেন সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহল। যার কথা বলছি তিনি হাবিবুর রহমান। একবাক্যে সবাই যাকে মানবিক ও ডায়নামিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মেনে নেন।

পেশায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেও সময় পেলেই কাছে টেনে নেন সুবিধাবঞ্চিতদের। পুলিশিসেবার বাইরে গিয়ে হাবিবুর রহমান মানবিক কাজ করতে সবসময় ভালোবাসেন। তিনি বদলে দিয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে। কাজ করছেন যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে। শুধু তাই নয়, ভালো কাজ করতে সহযোগিতার পাশাপাশি দেন দিকনির্দেশনাও। এজন্য খ্যাতি আছে ‘মানবিক পুলিশ অফিসার’ হিসেবে।

বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্ব পালনকালে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে পর্যটন মৌসুম ছাড়াও যে কোনো সময়ে পর্যটকরা আগের চেয়ে স্বাচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করেন। বিদেশি পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে তার নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রশংসিত হচ্ছে দেশে বিদেশে।

এমন গুরুদায়িত্বের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যও সর্বদা নিবেদিত প্রাণ তিনি। পাশাপাশি লেখালেখির মতো সৃষ্টিশীল কর্মেও সমান সক্রিয়। একের পর এক ইতিবাচক কর্মকাণ্ড দিয়ে হাবিবুর রহমান প্রমাণ করেছেন সৃজনশীলতা, মেধা, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে নেতৃত্ব দিলে কীভাবে পুলিশের মতো সদা ব্যতিব্যস্ত একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বন্ধুতে পরিণত করা যায়। মানবিক একটি পুলিশ বাহিনী গড়তে তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সমাজে এই উপলব্ধি ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে যে, জনগণ আর পুলিশ অসম্ভব ভালো বন্ধু।

কর্মক্ষেত্রেও উজ্জ্বল সাক্ষর হাবিবুর রহমানের। তার উদ্যোগে যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপ পুলিশে এনেছে অনেক পরিবর্তনও। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে আসা এই পুলিশ কর্মকর্তার পেশাগত সাফল্য তাকে নিয়ে গেছে ঈর্ষণীয় অবস্থানে। কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। পুলিশের চাকরির পাশাপাশি লেখালেখিতেও সক্রিয় অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। এ ছাড়া তিনি একজন ক্রীড়া সংগঠকও। কাজ করছেন দেশের কাবাডি নিয়েও।

মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান। নিজ গ্রামের মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তার প্রারম্ভিক শিক্ষাজীবন।

এস এম মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করা হাবিবুর রহমান সারদাতে প্রশিক্ষণকালে সকল সহকর্মীদের প্রিয় হয়ে ওঠেন।

নেতৃত্ব আর সৃজনশীলতা দিয়ে প্রশিক্ষণ সুপিরিয়র ‘আমার হলো শুরু’র সম্পাদক নির্বাচিত হন। যেখানে নিজের গবেষণা লেখা প্রকাশ পায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের শেকড় সন্ধানী ইতিহাস, ঐহিত্য ও করণীয় সম্পকৃত নানান দিক তুলে ধরা হয়।

প্রশিক্ষণ শেষ করে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রথম কর্মস্থল শুরু হয়। এরপর ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে পদায়নের পর হাবিবুর রহমান ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

২০০১ সালে ভোলায় এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পান এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরের বছর উদ্দিপ্ত ক্যারিয়ারে আঘাত আসে। তবুও থেমে থাকে না হাবিবুর রহমানের স্বপ্নযাত্রা। পুনরায় তার কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়।

ডিএমপির ডিসি হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে কর্মরত অবস্থায় নিজের মেধা ও নেতৃত্বগুণে তিনি সাধারণ মানুষ, সহকর্মী ও অধস্তন পুলিশ সদস্যদের কাছে হয়ে ওঠেন একজন সৃজনশীল, পজেটিভ ও মানবিক পুলিশি সেবার উজ্বল নক্ষত্র।

২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অভিনব সব কর্মকৌশল অবলম্বন করেন। চলমান অসঙ্গতি ও সংগঠিত অপরাধকে দমন করার পাশাপাশি সম্ভাব্য অপরাধ প্রতিরোধ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তার নেওয়া এসব উদ্যোগ আজও ধারাবাহিকভাবে চলমান।

হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে মাত্র একশ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেন; যা নিয়ে তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেন। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে উচ্চ প্রশংসা পান।

২০১৬ সালে হাবিবুর রহমান অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরে পদায়িত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্ব পান।

দীর্ঘ তিন বছর তিন মাসের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে গেল বছরের ১০ অক্টোবর অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। বুধবার তাকে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে স্বপদে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে হাবিবুর রহমান ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

গত ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চিঠিপত্র: শেখ মুজিবুর রহমান’ ও একই বইয়ের ইংরেজি সংস্করন ‘লেটারস অব শেখ মুজিবুর রহমান’ এর মোড়কও উম্মোচন করেন। এই বই দুটি সম্পাদনায় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত করিম।

ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বই দুটির মোড়ক উম্মোচন করেন। এর আগে হাবিবুর রহমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ সম্পাদনা করেন।

‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে তার গ্রন্থিত আরেকটি বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে আসে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি সম্পাদনায় মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন হাবিবুর রহমান। এছাড়াও হাবিবুর রহমানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার’ আলোচিত। এই বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন।

হাবিবের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে টেলিকম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এ উদ্যোগ। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ এটি সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭-র উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভের ঠিক পাশেই নবনির্মিত জাদুঘর ভবনের উদ্বোধন করেন।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি থাকা অবস্থায় হাবিবুর থানায়-থানায় সিসিটিভি লাগিয়ে তা নিজ দপ্তরে বসে মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশের সেবাকে সহজ করেছিলেন। ফলে মানুষ থানায় সেবা পেয়েছে। যেমন, বাসে নারীদের হয়রানিরোধে ১০০ সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়।

হাবিবুর রহমানের হাত ধরে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ এ ‘টেলিমেডিসিন সেবা’ চালু হয়। যেখানে বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হয়।

আপনার মতামত জানান