মহান আল্লাহ অসহায়ের শেষ আশ্রয়
মানুষ সামাজিক জীব, তাই তারা সমাজবদ্ধভাবে চলতেই পছন্দ করে। সমাজে চলতে গিয়ে তাদের সঙ্গে বহু মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেউ পরিণত হয় আত্মার আত্মীয়ে। যা মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, দাবি, ভরসা সৃষ্টি করে। সর্বাবস্থায় মানুষ তাদের আপন মানুষগুলোকে পাশে পেতে চায়। বিপদে তাদের পক্ষ থেকে সাহায্যের আশা করে। কিন্তু সাহায্য করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই সর্বাবস্থায় আল্লাহকেই একমাত্র অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি কি জানেন না যে আসমান ও জমিনের সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর? আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবকও নেই, নেই সাহায্যকারীও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০৭)
আল্লাহর রহমত ছাড়া ধন-সম্পদ, প্রভাব এমনকি সন্তান-সন্তুতিও মানুষের কোনো উপকারে আসে না। এগুলো মানুষের জন্য পরীক্ষামাত্র। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরীক্ষা। আর আল্লাহর কাছেই আছে মহা পুরস্কার। (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৮)
করোনা মহামারির সময় তা প্রতিটি মানুষ ভালোভাবে টের পেয়েছে, হাজার কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে, আবার করোনায় মৃত্যুবরণ লাশ দাফনের জন্য অনেকের কোনো আত্মীয়-স্বজনকে কাছে পাওয়া যায়নি। এটাই দুনিয়ার আসল চিত্র।
আমরা মানুষের কাছে অনেক কিছু আশা করি; কিন্তু বাস্তবতা হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে যতক্ষণ সাহায্য আসবে না, ততক্ষণ সারা দুনিয়া মিলেও আমাদের কোনো উপকারই করতে পারবে না।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং তিনি কিছু বন্ধ করলে কেউ তা উন্মুক্ত করতে পারে না। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২) রাসুল (সা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলেন, ‘জেনে রেখো, যদি সব মানুষ তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অন্যদিকে যদি সব মানুষ তোমার কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতি করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার ভাগ্যে লিখে রেখেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)
তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপরই পূর্ণ ভরসা করা উচিত। আল্লাহই আমাদের একমাত্র অভিভাবক। দুনিয়াতে যারা অপরের উপকারের জন্য চেষ্টা করবে, তারা অবশ্যই আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাবে। কিন্তু সেই উপকার সংঘটিত করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ না চাইলে গোটা পৃথিবী মিলেও কারো উপকার করতে পারবে না। তাই কোনো অবস্থাতেই আল্লাহকে ভুলে কোনো মাখলুকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া উচিত নয়; বরং মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তাআলার ওপর নির্ভরশীল হতে, তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
তাই আসুন, আমরা সবাই সব পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন করি।
আপনার মতামত জানান