ভুয়া ডাক্তারের পর ডক্টরেট ডিগ্রী জালিয়াতির অভিযোগ

প্রকাশিত

বাংলাদেশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিনিয়ত ভুয়া সনদপত্রধারী ডাক্তার খুজে বের করে শাস্তির আওতায় আনছেন। কিন্তু দেশে এবারই প্রথম ৯৮% নকল (কপি) থিসিস দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী জালিয়াতির মাধ্যমে হাকিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত লুৎফুল কবীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি সোনারগাঁ উপজেলার আমিনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমেদ মোল্লা বাদশার মেয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিনার স্বামী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের ডক্টরেট ডিগ্রী জালিয়াতির খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে পুরো উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ খবরে বিশেষ করে উপজেলার শিক্ষানুরাগী ও প্রকৃত ডক্টরেট ডিগ্রীধারীরা এ খবরে বিব্রত বোধ করছেন।

উপজেলার শিক্ষাবিদরা বলেছেন, লুৎফুল কবীর জালিয়াতি করে পুরো উপজেলাবাসীকে কলঙ্কিত করেছেন।

আসিফ হাওলাদারের অনুসন্ধানী একটি রিপোর্ট ( দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত) থেকে জানা যায়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। এই গবেষণার সহতত্ত্বাবধায়ক অভিযোগ করেছেন, একাধিকবার অনুরোধ করলেও লুৎফুল কবীর তাঁকে থিসিসের কোনো কপি দেননি। আবুল কালাম লুৎফুল কবীর বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বে আছেন।
২০১৪ সালের দিকে ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। তাঁর এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ আর সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করার জন্য সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর লাগে। কিন্তু দ্রুত কাজ শেষ করে প্রথমে সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য অভিসন্দর্ভটি জমা দেন লুৎফুল কবীর। সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে লুৎফুল কবীর গবেষণার সহতত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুককে ‘অনেক অনুনয়-বিনয়’ করে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে এলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।

গবেষণায় ৯৮ শতাংশ হুবহু নকলের বিষয়টি নজরে আসার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে একজন গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভে নিজের একটি গবেষণা থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দিয়েছেন সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসন।

এই দুটি চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত করে উপাচার্য কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফার্মেসি অনুষদের ডিনকে অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। অনুষদটির ডিন এস এম আবদুর রহমান জানান, যাচাইয়ের পর তিনি অভিযোগটির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার গবেষণাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের নামকরা একটি জার্নালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। এত বছর পরে কেন এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে, জানি না। এখানে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও যাঁরা গবেষণার তত্ত্ববধায়কের দায়িত্বে ছিলেন, অপরাধটা তাঁদের। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটি সত্য হয়ে থাকলে বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক।’ এত বছর পরে কেন অভিযোগ তোলা হচ্ছে—লুৎফুল কবীরের এমন প্রশ্নের বিষয়ে এই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের মন্তব্য, ‘অভিযোগ যেকোনো সময় উঠতে পারে। চৌর্যবৃত্তির দায় প্রথমত যিনি গবেষণা করছেন তাঁরই।

আপনার মতামত জানান