বিশ্বের সত্যিকারের নায়ক বাংলাদেশি রিজভী হাসানের

প্রকাশিত



বিশ্ব মানবিক দিবস আজ। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা (ইউওচা) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের সত্যিকারের নায়কদের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি রিজভী হাসানের নাম। রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিতদের জন্য চমৎকার কিছু স্থাপনার নকশাকার এই স্থপতি

সাব্বিন মোস্তফা আর আমি—স্থপতি হিসেবে দুজন শুরুতে কাজ করেছি ব্র্যাকের সঙ্গে। রোহিঙ্গা শিবিরে ‘গভর্ন্যান্সের’ কিছু কাঠামো আছে। প্রতিটি ক্যাম্পে একটি করে ক্যাম্প ইনচার্জ অফিস। আমরা মূলত সেগুলোর নকশা করার জন্য ডাক পাই। এরপর কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হলো, যাঁরা বিভিন্ন ভাবনা নিয়ে কাজ করেন। কেউ মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা, কেউ দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ। নিরাপদ, নারীবান্ধব জায়গা নিয়েও কাজ শুরু হয়। এরপর দেখা যায়, আশপাশের স্থানীয় সম্প্রদায়ের নারীরাও এগিয়ে আসছেন। তাঁরাও সহযোগিতা চান। এভাবেই তাঁরা প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান।

আমাদের কাজের ধরনই ছিল সমস্যা চিহ্নিত করতে করতে সামনে এগিয়ে যাওয়া। কোথায় কী হওয়া উচিত, কী করতে হবে, সেগুলো নিয়ে কমিউনিটির লোকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ওদের সংস্কৃতি, ধর্মের বিষয়গুলো আমরা আমলে নিই এবং সেভাবেই নকশা প্রণয়ন করি। স্থানীয় ও আশ্রিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার দিকেও আমাদের লক্ষ ছিল।

আমাদের বিশেষ দৃষ্টি ছিল কমিউনিটির চাহিদার দিকে। অস্থায়ী স্থাপনায় বিনিয়োগের সময় খুব পচনশীল সামগ্রী ব্যবহার করলে কয়েক দিন পরই নষ্ট হয়ে যায়। সেটি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয় আছে। আমরা ‘ম্যাটেরিয়ালের’ বিষয়ে কাজ করি। কোন জায়গা থেকে ম্যাটেরিয়ালগুলো আসবে, পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়বে, ভবিষ্যৎ রক্ষণাবেক্ষণ কেমন হবে—সেগুলোও বিবেচনায় নিই।

কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে মূলত বাঁশ বা কাঠের ঘরবাড়ি করত। ওদের রঙের ব্যবহারও এই অঞ্চলের বাঙালিদের চেয়ে একটু আলাদা। ওরা খুবই ‘ভাইব্রেন্ট’ রং ব্যবহার করে। এমনকি রোহিঙ্গা শিশুদের মুখের মেকআপও বাঙালিদের চেয়ে একটু আলাদা। ওদের আঁকা ছবিতেও রঙের ব্যবহার অন্য রকমভাবে চলে আসে। কিছু নকশা পেইন্টিংয়ে ওদের একটা নিজস্ব পদ্ধতি আছে। এসব বিষয় আমরা আমাদের নকশা ও পরিকল্পনায় সন্নিবেশিত করেছি। এমনভাবে ব্যবহার করছি, যা আমাদের এই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়। এখানে গাছের, কাঠের ব্যবহার কম করা হয়েছে। টেকনাফ অঞ্চলে আগে প্রচুর গাছ ছিল। সেগুলো এরই মধ্যে কমে গেছে। এ বিষয়টিও আমরা মাথায় রেখেছিলাম।

সুন্দর একটি গ্রামের নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত একজনকে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁদের আর কী প্রয়োজন। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, সন্তানদের জন্য শিক্ষা। এর একমাত্র কারণ হলো, সুশিক্ষা বা ভবিষ্যতের আশা না দেখতে পারলে তারা এই সুন্দর পরিবেশেও ভালো বোধ করবে না। নিজ বসতভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া এই লোকগুলোর জন্য ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

এখন পর্যন্ত আমাদের জীবনধারা অনেকাংশেই অভিবাসন দ্বারা প্রভাবিত। লোকজন গ্রাম থেকে শহরে আসে, বিদেশে যায়। সবাই একটু নিরাপদ জীবন খোঁজে। এর ফলে পেছনে ফেলে আসা ভূমিতে কী হচ্ছে তা আমরা খুব কমই গুরুত্ব দিই। ঠিক এই মুহূর্তে, শিক্ষাগতভাবে সুবিধা পাওয়া মানুষগুলোর আরো অনেক কিছু করা উচিত। এমনকি সবচেয়ে সাময়িক পরিস্থিতিগুলোতেও আমাদের ধৈর্য, সহানুভূতি ও একাত্মবোধ থাকতে হবে। কারণ সংগঠিতভাবে জীবনযাপনই সঠিক কাজের জন্য শান্তি ও মননশীলতা আনতে পারে।

অনুলিখন : মেহেদী হাসান

সুত্র : কালের কন্ঠ

আপনার মতামত জানান