বিশ্বকে কাঁদিয়ে পেলের বিদায়

প্রকাশিত

প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের কাটানোর মতো করে মৃত্যুকেও বার কয়েক পাশ কাটিয়েছিলেন পেলে। কিছুদিন আগেও অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়েছিল পেলের মৃত্যুসংবাদ। এ জন্য মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন। তবে এবার সেই কেলির ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেই এলো সেই দুঃসংবাদ। অনন্তলোকের পথে পাড়ি জমিয়েছেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, পৃথিবী যাকে একনামে চেনে পেলে হিসেবে। তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার, ফুটবলের রাজা, কালো মানিক পেলে।

পেলের পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতেই শোকের ঢল নামে। কিছুদিন আগে, বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানোর পর ব্রাজিল দলের ফুটবলাররা একসঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন পেলের দীর্ঘায়ু। নেইমার ছিলেন সেই আয়োজনের সামনের সারিতে। পেলের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে নেইমার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,‘কোথায় যেন পড়েছিলাম, পেলের আগে ১০ ছিল কেবলই একটা সংখ্যা। কথাটা কী সুন্দর, তবে সম্পূর্ণ। আমি তো বলি, পেলের আগে ফুটবল ছিল কেবলই একটা খেলা। পেলে সবকিছু বদলে দিয়েছিলেন। পেলের ছোঁয়ায় ফুটবল হয়েছে শিল্প, ফুটবল হয়েছে বিনোদন। পেলে ছিলেন গরিব মানুষের জন্য আশা ভরসার প্রতীক, পেলে ব্রাজিলকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছেন, ফুটবল আর ব্রাজিল দুটোই সমার্থক হয়ে উঠেছিল পেলের কারণেই। পেলে আর নেই কিন্তু পেলের জাদু থেকে যাবে। কারণ পেলে চিরন্তন।’

মেসি অবশ্য খুব বেশি শব্দ খরচ করেননি। ফিফার দ্য বেস্ট পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠানে পেলের সঙ্গে ছবি ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করে মেসি লিখেছেন, ‘শান্তিতে ঘুমাও পেলে।’

১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন ১৭ বছর বয়সী পেলে। বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করা ২০ বছরের কম বয়সী আর একজনই ফুটবলার, কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফরাসি এই তারকাও ব্যথিত পেলের বিদায়ে, ‘ফুটবলের রাজা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু তার ছাপ রেখে গেছেন খেলাটায়। তার কথা কেউ কোনোদিন ভুলবে না। শান্তিতে ঘুমাও রাজা।’

ব্রাজিলের রোনালদো সইতে পারছেন না পেলের চলে যাওয়ার শোক, ‘অনন্য, বিস্ময়কর প্রতিভা, অসাধারণ কৌশল, নিখুঁত, অতুলনীয়। পেলে একবার ফুটবল খেলতে শুরু করে সেই যে শীর্ষে উঠলেন, তাকে আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি। ফুটবলের রাজা চলে গেলে…তিনি একজনই, সর্বকালের সেরা। গোটা বিশ্ব শোকাবহ, তার পাশে নিজের নাম থাকাটাও বিরাট সম্মানের। পেলে হচ্ছে ফুটবলের সেই স্কুল, যেখানে সবাইকে একবার হলেও আসতে হয়েছে। পেলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে নিজের প্রভাব বিস্তার করে গেছেন, পেলে এভাবেই বেঁচে থাকবেন। আজ এবং সবসময়, আমরা সবাই আপনার সাফল্যের উদযাপন করব। ধন্যবাদ পেলে, শান্তিতে ঘুমাও।’

পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো লিখেছেন, ‘ব্রাজিলের সবার প্রতি আমার গভীর সমবেদনা, বিশেষ করে পেলের শোকাহত পরিবারের প্রতি। ফুটবলের চিরকালের রাজা পেলের বিদায়ে শুধু বিদায় বলাটাই যথেষ্ট নয় কারণ এই শোক পুরো ফুটবলবিশ্বের। পেলে লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, সব সময়ের জন্য পেলে এক উদাহরণ। আমার প্রতি তিনি সবসময় যে স্নেহ ও ভালোবাসা দেখিয়েছেন, একই রকম করে আমিও তাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করে এসেছি সবসময়। দূরত্ব কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পেলে কখনো হারিয়ে যাবেন না, ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে তিনি চিরকাল থাকবেন। ফুটবলের রাজা, আপনি শান্তিতে ঘুমান।’

রবার্ট লেভানডফস্কি লিখেছেন, ‘স্বর্গ পেল নতুন এক তারা, রাজা আপনি শান্তিতে ঘুমান।’ গ্যারি লিনেকার লিখেছেন, ‘ফুটবলারদের ভেতর সবচাইতে প্রাণখোলা এবং সদাহাস্য মানুষটি ছিলেন পেলে। তার সমকক্ষ খুবই অল্প কয়েকজন। তিনি হলুদ জার্সিতে সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ট্রফিটি তিনবার জিতেছেন, তিনি ফুটবলার হিসেবে অমর।’

ফুটবল অঙ্গনের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, অন্যান্য খেলার ক্রীড়াবিদসহ অনেকেই শোকপ্রকাশ করেছেন পেলের মৃত্যুতে। সবার শব্দেই একটাই সুর পেলের মানব শরীরের মৃত্যু হলেও কিংবদন্তি পেলের মৃত্যু নেই।

আপনার মতামত জানান