বাবা-মাকে ভালোবাসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিন হয়না….
নিতু (ছদ্মনাম) রহমান সাহেবের বড় মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসেছে। মেয়ে অনেকদিন পর বাসায় আসায় বাবা মেয়ের পছন্দের সব প্রিয় জিনিসগুলো বাজার করে এনেছেন।আর সেগুলোকে মজা করে রান্না করতে করতে মায়ের দম ফেলার সুযোগ নেই। রাতে খাবার টেবিলে বাবা-মা আগ্রহ নিয়ে আছেন, অনেকদিন পর মেয়ের সঙ্গে জম্পেশ একটা গল্প হবে।
অনেক অপেক্ষার পর নিতু আসলো।কানে হেডফোন, আর একহাতে মুঠোফোন। ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে আঙুল গুলোও হয়ত কষ্ট পায়,চোখ ও হয়ত সায় দেয় না সবসময় রঙিন স্ক্রিন দেখানোর জন্য। কিন্তু প্রযুক্তি আর সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নাকি সবসময়ই এমন আপডেট থাকতে হয়,এটাই তার ধারণা। রাতে ডিনারে বাবা মায়ের সঙ্গে শুধু হু/হ্যা/না এসব শব্দ ব্যবহার করেই খাবার শেষে রুমে চলে গেল সে।
কতদিন ধরে সন্তানের সঙ্গে যে মনভরে গল্প হয় না,এই আফসোস করতে করতেই মিস্টার ও মিসেস রহমান চোখের নোনা জলে সিক্ত হয়ে নিথর হয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারেই বসে রইলেন।
এদিকে রাতেই নিতু নিজের ফেসবুক ওয়াল থেকে “Happy mother day my mommy” এটি লিখে আর মায়ের সঙ্গে তোলা একটা ছবি দিয়ে পোস্ট করে দিলেন। বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে গল্প করার আশায় ডাইনিংয়ে বসে আছেন,আর সন্তান মাকে বিক্রি করে লাইক,কমেন্ট আর শেয়ার গুনছে ফেসবুকে বসে।
জি, এটাই বর্তমান প্রজন্মের খুব সাধারণ একটি চিত্র।
বাবা-মা স্টাইল বোঝে না, কিছু জানে না,তারা ব্যাকডেটেড এসব বলে অনেক সন্তানই প্রতিনিয়ত বাবা-মাকে অপমান করে, যা কখনই তাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। ধীরে ধীরে বয়স্ক মানুষদের প্রতি ছোটদের এই মানসিক অবহেলা অনেক বাবা-মায়ের শারীরিক ও মানসিক চাপগ্রস্থ করতে বাধ্য করছে। কিন্তু এর দায় কার? বিবেকের আয়নায় চলুন নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজি।
ক) আপনি দিনে কতবার বাবা-মাকে ফোন দেন?
খ) ছুটিতে বাসায় গেলে বাবা-মাকে কত ঘন্টা সময় দেন?
গ) আপনার বাবার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সর্ম্পকে আপনি কতটুকু জানেন?
ঘ) তিনি কোন ওষুধ খান আপনি জানেন?
ঙ) তিনি ওষুধগুলো নিয়মিত খান কি না কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, খেয়াল করেছেন কখনো?
চ) আপনার বাবা-মা বয়স অনুযায়ী কেমন খাওয়া দাওয়া করেন, তার পুষ্টিমান কেমন আছে, জানতে চেয়েছেন কখনো?
ছ) আপনার বাবা-মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কখনও কি তাদের নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে গেছেন?
জ) বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে অনেক পার্টি করা আপনি কখনও তাদের নিয়ে দামি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে শখের বসে নিয়ে গেছেন?
এই উত্তরগুলো জানা খুব জরুরি। বাবা-মা চিরদিন থাকবেন না। কিন্তু শেষ বয়সে আপনার উপর তাদের পরনির্ভরশীলতা না বাড়িয়ে বরং কিভাবে তাদের সুস্থ রাখা যায়,সেই চিন্তা করুন। বয়স শুধুই একটি সংখ্যা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বাবা-মাকে ছোট করবেন না,কারণে অকারণে খাটো করবেন না। জীবনে সব ফেরত পাওয়া যায়, কিন্তু বাবা-মায়ের কোনো বিকল্প হয় না।
তাই তারা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে তাদের সময় দিন, তাদের সঙ্গে হাসুন, তাদের খুশী রাখুন।তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি নিয়মিত দেখভাল করুন।
জানেনই তো, দুহাত তুলে তাদের মোনাজাত পরিবর্তন করতে পারে পুরো আপনার জীবনকেই।
ভাল থাকুন,ভাল রাখুন আপনার বাবা-মাকে।
সূত্রঃ যুগান্তর
আপনার মতামত জানান