বরিশালে জার্মানি বউ
সুদূর জার্মানি থেকে প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন আলিসা থেওডোরা পিত্তা নামে এক জার্মান তরুণী। পেশায় একজন নার্স। ভালোবাসার টানে শুধু দেশ ছেড়ে উড়াল দিয়ে বরিশালে আসেননি, গ্রহণ করেছেন ইসলাম ধর্ম। এখন তার নাম আলিসা বেগম। আলিসার স্বামী বরিশাল শহরের উপকণ্ঠ চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি উলালবাটনা গ্রামের শহীদুল ইসলাম ওরফে ইতালি শহীদের একমাত্র ছেলে রাকিব হোসেন শুভ। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ তারা বিয়ে করেন। কিন্ত করোনাভাইরাসের কারণে নববধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসতে পারেননি।
শহিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার (৪ মার্চ) বিকেলে নববধূকে নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে শুভ। শনিবার (৫ মার্চ) সকালে হেলিকপ্টারে বরিশালে যান। হেলিকপ্টারে করে জার্মান বধূকে আনা হবে, এমন খবর আগেই প্রচার হয় এলাকায়। হেলিকপ্টার ও জার্মান বউ দেখতে কয়েক শ’ মানুষ জড়ো হয় কাগাশুরা বাজার এলাকায়। বরিশাল বিমানবন্দর থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে যান। পরে নববধূকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শুভর স্বজনরা।
জানা যায়, শুভ বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে। রেলওয়ে ডিপ্লোমা পাস করে ২০১১ সালে জার্মানিতে পাড়ি জমান। সেখানে সিটি রেলওয়ে সার্ভিসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ নেন। একপর্যায়ে স্থানীয় বেইলি ফিল্ড ডায়ালন্ড্রোভ এলাকার বাসিন্দা আলিসা থেওডোরা পিত্তার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রণয় ঘটে সেই প্রণয় প্রেমে রূপান্তরিত হলে জার্মানি তরুণী আলিসাকে বিয়ে করেন শুভ। তবে সেখোনে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। এজন্য বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। সেখানে বউভাত ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন তারা। আলিসা পেশায় নার্স। তার বাবা ও মা সেখানের চাকরিজীবী।
শুভ বলেন, গত বছরের ৫ মার্চ আলিসা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আলিসা বেগম হিসেবে আমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। শনিবার আমাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই শুক্রবার জার্মানি থেকে রওনা হয়ে বাংলাদেশে আসি। আজ সকালে বরিশাল বিমানবন্দরে আসি। এরপর হেলিকপ্টারযোগে আলিসাকে নিয়ে বাড়ি আসি। আলিসার সঙ্গে এসেছে তার বান্ধবী লেইসা।
শুভ বলেন, জার্মানিতে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় প্রায়ই আলিসার সঙ্গে দেখা এবং কথা হতো। এভাবে কিছুদিন চলার পর আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সম্পর্ক চলে অনেকদিন। দুজনই বুঝতাম, আমাদের মধ্যে ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু প্রস্তাব কে আগে দেবে, এটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বিষয়টি মাথায় রেখে দুজন-দুজনকে আরও বোঝার চেষ্টা করলাম। যখন বুঝলাম, আলিসা আমাকে মনেপ্রাণে চায়। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রস্তাব দেওয়ার।
একদিন আলিসার মনের অবস্থা বুঝে ভালোবাসার কথাটা জানালাম। উত্তর আসার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, আলিসাও অপেক্ষায় ছিল প্রস্তাবের। ভালোবাসা হয়ে যাওয়ার পর আর সেভাবে ভালোবাসার কথা বলা হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী বিষয়টি আমার পরিবারকে জানাই। তাদের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়ার পর আলিসাকে তার পরিবারকে রাজি করাতে বলি। আলিসার পরিবারও আমাদের ভালোবাসায় সম্মতি দেয়। বিয়ের আগে আলিসাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলি। এতে রাজি হয়ে যায়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর দুই পরিবারের সম্মতিতে আমরা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই।
শুভ বলেন, বাংলাদেশে আসতে গেলে আমাদের দুজনকেই ছুটি নিতে হবে। এজন্য আমরা আগেভাগে বিবাহবার্ষিকীর দিনটা ঠিক করে রাখি। ওই দিন দেশে যাবো। সেভাবে ছুটি নিয়ে জার্মানি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসি বরিশালে। দেশের মাটিতে পা রাখার পর কতটা যে ভালো লেগেছে, তা বলে বোঝাতে পারবো না।
শুভ বলেন, আমরা বিয়ে করেছি বিদেশে। সেখানে আমাদের সমাজের যে রীতিনীতি ও উৎসব তা পালন করতে পারিনি। আমাদের দেশের বিয়েতে যতটা উৎসব হয়, তাও হয়নি। আমি চাই, নতুনভাবে বিয়ের উৎসব করতে। আলিসাও আমাদের দেশের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়েছে। সেও চাচ্ছে, এদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী বিয়ের উৎসব হোক। আমার এবং আলিসার আবদারে আমার বাবা-মা ও স্বজনরা নতুনভাবে বিয়ের উৎসবের আয়োজন করেছেন। আগামী ৯ মার্চ হবে আমাদের গায়েহলুদ। ১০ মার্চ গ্রামবাসীর জন্য বউভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানান