বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের লাশ সোনারগাঁয় শ্বশুরবাড়িতে দাফন

প্রকাশিত

বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের লাশ নিয়ে সোনারগাঁয় যাচ্ছে প‌রিবা‌র, শ্বশুরবাড়িতে দাফন



ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। কিন্তু লাশ দাফনে স্থানীয়দের কঠোর আপত্তি থাকায় ভোলার প্রশাসন কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি। তাই মাজেদের লাশ শশুরবাড়ী নারায়নগন্জের সোনারগায়ে দাফন করা হবে।

সা‌ড়ে তিনটায় লাশ বুঝে নি‌য়ে কারাগার থে‌কে বের হন স্ত্রীসহ স্বজনরা।

১২ এপ্রিল ভোরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামে লাশ দাফন করা হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শনিবার রাত ১২টা ১মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জল্লাদ শাজাহানের নেতৃত্বে একদল জল্লাদ ফাঁসি কার্যকর করেন বলে কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ফাঁসি কার্যকরের সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঢাকা জেলা প্রশাসক, সিনিয়র জেল সুপার, সিভিল সার্জন, পুলিশের একজন কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ১০ টা ৫৫ মিনিটে ফাঁসির প্রস্তুতি দেখতে কারাগারে যান আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা।

ফাঁসি কার্যকরের আগে কারা মসজিদের ইমাম আবদুল মাজেদকে তার সেলে গিয়ে তওবা পড়ান। ওই সময় চিৎকার করে কেঁদে তওবা পড়েছেন মাজেদ বলে জানিয়েছে কারা সূত্র।

ফাঁসির জন্য শনিবার দুপুরে মহড়া দেয় জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে মনির ও সিরাজসহ কয়েকজন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এটিই প্রথম ফাঁসি, তাই কয়েক দফায় ট্রায়াল দেয়া হয়।

রাতে কারাগারে গিয়ে মাজেদের সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রীসহ পরিবারের কয়েক সদস্য।

করোনা ভাইরাসের কারণে ফাঁসির সময় সব কর্ম কর্মকর্তা ও জল্লাদরা প্রতিরোধক পোাশাক পড়ে ছিলেন।

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবা‌দিক‌দের বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রোটেকশন হিসেবে আমরা সবাই এখানে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও চোখে চশমা পরা অবস্থায় ছিলাম। প্রোটেকশন নিয়েই খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। শ‌নিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মি‌নি‌টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরপর ১৫ মিনিট ধরে তার দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে মর‌দেহ নামা‌নোর পর উপস্থিত চিকিৎসক দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে কথা হলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগা‌রের মাহবুবুল ইসলাম বলেন, রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে মাজেদকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। এরপর ১৫ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয় তার দেহ। পরে সেখান থেকে নামিয়ে উপস্থিত চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এবং তখনই মৃত ঘোষণা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আব্দুল মাজেদ ২৫ বছর ধরে ভারতে পলাতক ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত ২৬ মার্চ ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশে আসেন। ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।

তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিটিটিসি হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

৮ এপ্রিল মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান আব্দুল মাজেদ। তবে আবেদনটি নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

আপনার মতামত জানান