বই মেলায় বঙ্গবন্ধুবিষয়ক বইয়ের আলোচনা
মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় বইমেলার মূলমঞ্চে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন’ বই বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় । মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান ও সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঐতিহাসিক পটভূমিতে বঙ্গবন্ধুর ‘প্রথম বিপ্লব’ অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি, ‘বাংলাদেশ বিপ্লব’ হিসেবে সর্বদাই বিবেচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি অনুগত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় দল গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর এ উদ্যোগ রাজনৈতিক বিপ্লবের দ্বিতীয় ধরন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্যই তৎকালীন বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। ব্যাপক ও বিস্তৃত কর্মসূচীর সার-সংক্ষেপের কারণে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন গ্রন্থটি ব্যাপক প্রচার ও পাঠ কাম্য।
গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ বিষয়ক অনেক গ্রন্থ লেখা হলেও তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লব নিয়ে গবেষণাধর্মী ও বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ নেই। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের গুরুত্বকে তুলে ধরাই এই গ্রন্থের মূল প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শকে বুঝতে হলে দ্বিতীয় বিপ্লবের পটভূমি ও এর দার্শনিক রূপ উপলব্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন গ্রন্থে তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী ও প্রেক্ষাপট বস্তুনিষ্ঠভাবে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী তার সারা জীবনের রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ থেকে উৎসারিত যার মূলে ছিল সাম্য ও সাধারণ মানুষের মুক্তির চিন্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সব কর্মসূচীই মূলত ধাবিত হয়েছে দ্বিতীয় বিপ্লবের দিকে যার একুশ শতকীয় রূপ আমরা দেখতে পাই ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ধারণার মধ্যে। আমাদের কাজ হবে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীকে ব্যাপকভাবে সামনে নিয়ে আসা এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সাম্যের আদর্শনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন তুলে ধরার যে দায়িত্ব আমাদের রয়েছে তা কেবল আবেগ দিয়েই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবনের পর্যালোচনা। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন এ জাতীয় গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্বে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি কাজী রোজী, কবি সানাউল হক খান, দিলারা হাফিজ ও কবি আসাদ মান্নান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন, গোলাম সারোয়ার, ঝর্ণা সরকার। সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লিলি ইসলাম, সারোয়ার হোসেন বাবু ও জয়ন্ত আচার্য। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড) এবং নাজমুল আলম খান (মন্দিরা)।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাশিল্পী হাবিব আনিসুর রহমান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, লেখক অঞ্জন আচার্য ও শিশুসাহিত্যিক পলাশ মাহবুব।
আজকের মেলা : বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অজয় দাশগুপ্ত রচিত বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন ও আবু সাঈদ খান। সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আপনার মতামত জানান